রফিক আজাদের স্ত্রীর বাড়ির একাংশ উচ্ছেদ: ক্ষোভে-বেদনায় দিলারা হাফিজ

প্রখ্যাত কবি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত রফিক আজাদের স্ত্রীর ধানমন্ডির বাড়ির একাংশ ভেঙে দিয়েছে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৭ এপ্রিল) সকালে হাউজিং অ্যান্ড পাবলিক ওয়ার্কস অধিদফতরের উদ্যোগে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় বাড়ির পূর্বাংশের দুটি ইউনিট গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

১৯৮৮ সালে একতলা বাড়িটি রফিক আজাদের স্ত্রীর দিলারা হাফিজের নামে সাময়িকভাবে বরাদ্দ দেয় ‘এস্টেট অফিস’। দিলারা হাফিজ তখন ইডেন মহিলা কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বরাদ্দনামায় উল্লেখ রয়েছে, এই বরাদ্দের মাধ্যমে বাসার ওপর তার কোনও অধিকার বর্তাবে না, তবে পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে বসবাস করতে পারবেন।

রফিক আজাদের স্মৃতিবিজড়িত ঠিকানা

ধানমন্ডির ১ নম্বর সড়কের ১৩৯/৪এ ঠিকানার বাড়িটিতে প্রায় ২৯ বছর ধরে বসবাস করছিলেন রফিক আজাদ ও তার পরিবার। কবির স্ত্রী, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ দিলারা হাফিজ বর্তমানে বাড়ির এক ইউনিটে থাকতেন, বাকি তিনটি ইউনিট অন্যদের নামে বরাদ্দ ছিল।

বাড়িটির পশ্চিমাংশে কম-বেশি পাঁচ কাঠা জমির ওপর নির্মিত। এই আবাসে বসেই রফিক আজাদ লিখে গেছেন ২০টিরও বেশি কাব্যগ্রন্থ। এখানেই গড়ে উঠেছিল তার সাহিত্যকর্ম ও সংগ্রামের অনন্য অধ্যায়।

বিতর্কিত বরাদ্দ ও আইনি প্রক্রিয়া

১৯৮৮ সালে বাড়িটির একটি একতলা ইউনিট সাময়িক বরাদ্দ পান দিলারা হাফিজ, তখন তিনি ইডেন মহিলা কলেজের প্রভাষক। বরাদ্দপত্রে উল্লেখ ছিল, স্থায়ী মালিকানা নয়—পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত শুধু বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

২০১২ সালে এক ব্যক্তি, সৈয়দ নেহাল আহাদ, বাড়িটির মালিকানা দাবি করলে আইনি বিরোধের সূচনা হয়। দিলারা হাফিজ হাউজিং অ্যান্ড পাবলিক ওয়ার্কস অধিদফতর, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত প্রথমে অস্থায়ী এবং পরে স্থায়ী স্থিতাবস্থা দেন। মামলাটি এখনও চলমান, আগামী ২৫ মে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।

নোটিশ ছাড়াই উচ্ছেদ, বিচ্ছিন্ন পানি-বিদ্যুৎ

দিলারা হাফিজ অভিযোগ করেন, তাকে লিখিতভাবে বাড়ি ছাড়ার কোনও নোটিশ দেওয়া হয়নি। শুধু মৌখিকভাবে কয়েক দিনের সময় জানানো হয়েছিল। কিন্তু বুধবার সকালে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে বাড়ির একাংশ ভেঙে ফেলার কারণে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে তিনি এবং পরিবারের সদস্যরা চরম দুরবস্থায় পড়েছেন।

তিনি আরও জানান, এই বাড়িটি শুধু বসবাসের জায়গা নয়—এখানে রয়েছে একজন জাতীয়ভাবে স্বীকৃত কবির স্মৃতি, একজন মুক্তিযোদ্ধার অস্তিত্ব। আমি আশা করিনি চলমান মামলার মধ্যে এমন হঠাৎ উচ্ছেদ অভিযান হবে।

স্মৃতির প্রতি সম্মান দাবি

দিলারা হাফিজ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার স্বামী রফিক আজাদ একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি, বাংলা একাডেমি পুরস্কারজয়ী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার স্মৃতি রক্ষার্থে বাড়িটির অন্তত একটি অংশ স্থায়ী বন্দোবস্তের জন্য গতকালও আমি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলাম।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কবির ভক্ত, সাহিত্য অনুরাগী ও নাগরিক সমাজ এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা কবির স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি রক্ষা ও তার পরিবারের জন্য সম্মানজনক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।

শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা দিলারা হাফিজ সর্বশেষ সরকারি তিতুমীর কলেজে অধ্যক্ষ এবং পরবর্তীতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। তাদের দুই ছেলে অভিন্ন আজাদ ও অব্যয় আজাদ দুই জনই প্রবাসে বসবাস করছেন।