বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন-কেন্দ্রিক পৃথক ২ মামলায় ভোলা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসানের ৩ দিনে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মিনহাজুর রহমানের আদালত রিমান্ডের আদেশ দেন। এদিন সকাল ৯টায় তাদের আদালতের হাজতখানায় হাজির করা হয়। এরপর সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে তাদের হাজতখানা থেকে আদালতের উদ্দেশে আনা হয়। পরে সকাল ১০টা থেকে তাদের রিমান্ড শুনানি শুরু হয়।
জ্যাকবের তিন দিনের রিমান্ড
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর ভাটারা থানাধীন নতুন বাজার এলাকায় হোটেল কর্মচারী রোহান হত্যাচেষ্টা মামলায় আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার সাব-ইন্সপেক্টর হাফিজুর রহমান তার সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আদালত তার উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
জ্যাকবের পক্ষে তার আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, জ্যাকব ২০০৯ সাল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি আগেও রিমান্ডে ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তার নির্বাচনি এলাকায় তার বিরুদ্ধে কোনও মামলা হয়নি। তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন প্রার্থনা করছি।
পরে আদালত তার তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
চৌধুরী মামুন-আবুল হাসানের রিমান্ড
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে শাওন তালুকদার নামে এক ব্যক্তি গুলিতে নিহতের মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের তিন দিন এবং যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল হাসানের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার সাব-ইন্সপেক্টর মেহেদী হাসান তাদের ৫ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত তাদের উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। এদিন শুনানিকালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি হত্যার শিকার হয় যাত্রাবাড়ীতে। নেতৃত্বে ছিলেন আবুল হাসান। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তারাও পালিয়ে যায়। পরে যাত্রাবাড়ী থানাতে ১৮ টি লাশের স্তূপ পাওয়া যায়। আর দুই হাজার লোক হত্যা এবং ৩০ হাজার লোক আহত হয়। এর মাস্টারমাইন্ড চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। অফিসে বসে ষড়যন্ত্র করেন আন্দোলন দমানোর, কিভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন সবাই দেখেছেন।’
মামুনের পক্ষে তার আইনজীবী বলেন, ‘তিনি (মামুন) শারীরিকভাবে অসুস্থ। এরআগে ৮০ থেকে ৮৫ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন মনে করলে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।’
তখন ফারুক ফারুকী বলেন, ‘২ হাজার হত্যার ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যেকটি ঘটনায় মামলা হবে। অর্ধেক মামলাও হয়নি। বড় ধরনের আসামি। প্রত্যেক মামলায় তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’
তবে আবুল হাসানের পক্ষে কোনও আইনজীবী ছিলেন না। আদালত জানতে চান, আবুল হাসান কিছু বলবেন কি না। তখন আবুল হাসান বলেন, ‘না, স্যার কিছু বলবো না।’
পরে আদালত চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের তিন দিন এবং আবুল হাসানের পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ৫ আগস্ট বিকেলে পুলিশের চালানো গুলিতে নিহত হন শাওন তালুকদার। পরে এ ঘটনায় মামলা করা হয়।