বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। ১৪৩১ বঙ্গাব্দকে বিদায় জানিয়ে উচ্ছ্বাস আর উৎসবের আমেজে নতুন বছর ১৪৩২ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিয়েছে বাঙালি জাতি। পহেলা বৈশাখে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে গ্রীষ্মের কাঠিন্য ভেদ করে জেগে উঠেছে বাঙালি হৃদয়। এটি শুধু একটি নতুন বছরের শুরু নয়, এটি বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর আত্মপরিচয়ের প্রতিচ্ছবি। উৎসবের রঙে রঙিন হয়ে ওঠে বাংলার আকাশ বাতাস, জেগে ওঠে প্রাণের মেলা।
নববর্ষের প্রথম প্রভাতেই রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণের সুরধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। যা নববর্ষের আগমনকে আরও আনন্দময় করে তোলে। আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই ছুটে আসে এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে, পুরোনো দিনের গ্লানি আর মলিনতাকে ধুয়ে মুছে নতুন করে জীবন শুরুর প্রত্যয়ে।
সারা দেশ জুড়ে চলে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে রাজপথ পর্যন্ত আলপনার রঙে রাঙিয়ে তোলে। হলুদ, লাল, সবুজ আর সাদা রঙের আলপনা যেন বাঙালির চিরায়ত সৌন্দর্যবোধের প্রকাশ ঘটায়। মেয়েরা পরে লাল-সাদা শাড়ি, খোঁপায় গোঁজে তাজা ফুল। ছেলেরা পাঞ্জাবি আর ধুতি পরে অংশ নেয় বর্ষবরণ উৎসবে।
পহেলা বৈশাখের প্রধান আকর্ষণ হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা, তবে এবার তার নাম ছিল বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে আয়োজিত এই শোভাযাত্রা আজ শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বজুড়ে পেয়েছে খ্যাতি। নানা রঙের মুখোশ, বিশাল আকারের লোকশিল্পের প্রতীক, পশুপাখি নিয়ে এই শোভাযাত্রা বের হয়। এটি শুধু আনন্দ শোভাযাত্রা নয়, এর মধ্যে থাকে বাঙালির সাহস, ঐতিহ্য আর অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বার্তা।
পহেলা বৈশাখ শুধু একটি উৎসব নয়, এটি বাঙালির মিলনমেলা। এই দিনে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবাই একাত্ম হয়। পুরানো দিনের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবাই একসঙ্গে হাসে, গল্প করে আর নতুন করে সম্পর্কের বাঁধন গড়ে তোলে। এ
এ দিনে অনেক বিদেশিরাও আসে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায়।
এই দিনটি আমাদের শেখায় ঐক্য, সম্প্রীতি আর ভালোবাসার কথা। তবে শুধু আনন্দ আর উল্লাস নয়, পহেলা বৈশাখ মনে করিয়ে দেয় আমাদের শেকড়ের কথা, সংস্কৃতির কথা। এই দিনটি আমাদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখার এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তা পৌঁছে দেওয়ার একটি সুযোগ।
উৎসবের এই আনন্দধারা শুধু একদিনের জন্য নয়, এটি বাঙালির জীবনে নতুন করে প্রেরণা যোগায়। নতুন বছর যেন বয়ে আনে সুখ, সমৃদ্ধি আর শান্তি– এই কামনাই থাকে সবার মনে।
পহেলা বৈশাখের এই উৎসবমুখরতা প্রমাণ করে, বাঙালি তার সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে কত গভীরভাবে ভালোবাসে। আর এই ভালোবাসাই যুগে যুগে বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছে।