হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগের জন্য তিনজনের নাম প্রস্তাব করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। তারা হলেন— প্রকৌশলী শুভাশিস বড়ুয়া, মো. শরিফুল ইসলাম ও এএইচ এমডি নুরউদ্দিন চৌধুরী। তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের ৯৯.৫% কাজ শেষ হওয়ার পর ০.৫% কাজের জন্য বিদ্যমান পিডিকে বাদ দিয়ে নতুন পিডি নিয়োগের প্রস্তাব কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বারবার পিডি নিয়োগে তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) দুর্নীতিবিরোধী সমন্বয় কমিটির প্রধান ড. জোবাইদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্পের পিডি ঘন ঘন পরিবর্তন করা না গেলেও সরকারি এ আইন মানা হচ্ছে না। এ কারণে সরকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। নতুন পিডি নিয়োগ না করে বর্তমান পিডি দ্বারাই প্রকল্পের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য তিনি দাবি জানান’।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে প্রকল্পের ৯৯.৫% কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ফলে অবশিষ্ট ০.৫% কাজ বাস্তবায়নের জন্য নতুন পিডি নিয়োগের জটিলতায় যাওয়া ঠিক হবে না। এর চেয়ে বিদ্যমান পিডি তার মূল দায়িত্বের পাশাপাশি প্রকল্পের অবশিষ্ট সামান্য কাজ খুব সহজেই শেষ করতে পারবেন। যদি আবারও প্রকল্পটি পিডি জটিলতায় পড়ে তাহলে চলতি বছর কিংবা আগামী বছরের শুরুতেই তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করা হবে বলে যে ঘোষণা দেওয়া রয়েছে তা আরও দীর্ঘায়িত হবে’।
বেবিচক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর একেএম মাকসুদুল ইসলামের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল হওয়ার পর পিডিশূন্য হয়ে পড়ে তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্প। এ সময় প্রকল্পের কাজে স্থবিরতা দেখা দেয়। নতুন পিডি নিয়োগে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দেয়। পিডি নিয়োগের জন্য জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং দুদকের ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়। এ দুটি ছাড়পত্র পেতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। পরবর্তীতে প্রায় তিন মাস পর প্রকৌশলী জাকারিয়া হোসেনকে পিডি হিসেবে নিয়োগ করা হয়। বর্তমানে জাকারিয়া হোসেনকে পিডির পাশাপাশি প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের পিডি হিসেবে ওই তিনজনকে প্রস্তাব করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিডি না থাকার কারণে দীর্ঘ তিন মাস সময়ে প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ঠিকাদারের ও পরামর্শকের বিল পরিশোধ বন্ধ থাকে এবং টাকার অভাবে বিদেশ থেকে আমদানি করা মালামাল বন্দর থেকে ছাড়করণ কাজও বন্ধ হয়ে যায়। এতে চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারের বিলের ওপর বিলম্ব জরিমানা ফি, বন্দর থেকে মালামাল ছাড়করণের বিলম্ব জরিমানা ফি, কাজের সিদ্ধান্ত প্রদানে বিলম্বজনিত কারণে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি প্রভৃতি বাবদ সরকারের প্রায় একশ’ কোটি টাকা লোকসান হয়।
তারা বলছেন, এসব বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পের বারবার পিডি পরিবর্তন হলে নতুন পিডির নমুনা স্বাক্ষর মন্ত্রণালয়, ইআরডি, দাতা সংস্থা জাইকা, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ নানা প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করতে হয়। এ প্রেরণ ও অনুমোদন প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ। এ কারণে গত ২৩ ডিসেম্বর পর থেকে আজও বৈদেশিক ঠিকাদারের বিলের একটি অংশ পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। ফলে সরকারকে বিলম্ব জরিমানা ফি গুনতে হচ্ছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ প্রায় ৩ মাস সময় পর প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনে নতুন পিডি নিয়োগ হলেও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আবারও নতুন পিডি নিয়োগের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করার বিষয়টি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। কেননা, এ নতুন পিডি নিয়োগ করতে আবারও দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ হবে এবং প্রকল্প কাজে নানাবিধ জটিলতা সৃষ্টি হবে এবং অহেতুক সরকারি অর্থের অপচয়ও হবে।
এদিকে এ বিষয়ে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।