রাজধানীতে ওয়াসার পানি সংকটের চিত্র নতুন নয়। বরাবরের মতো ঢাকা ওয়াসা পানি সংকটের নানা বাহানা দিলেও ‘পানির অপচয়’ যে এর প্রধানতম একটি কারণ তা সবারই জানা। কারিগরি ত্রুটি, অবৈধ সংযোগ, অযথা ও অতিরিক্ত পানি ব্যবহার, অযথা কল খুলে রাখা, ওয়াসার গাফিলতিসহ বিভিন্ন কারণে এই অপচয় হয়। তবে এবার ওয়াসার গাফিলতি লক্ষ্যণীয়।
পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক সংলগ্ন এলাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে একনাগাড়ে ঢাকা ওয়াসার লিকেজ হওয়া পাইপ দিয়ে পানি বেরোচ্ছে। এতে দৈনিক হাজারো লিটার পানির অপচয় হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, লিকেজ পাইপ লাইন থেকে পানি বের হচ্ছে গত এক সপ্তাহ ধরে। ফোন করে ওয়াসার অফিসে জানানোর পরও এর কোনও সমাধান হয়নি। এমনকি ওয়াসার দায়িত্বশীল কেউ ঘটনাস্থল পরিদর্শনেও আসেনি।
বুধবার (২৬ মার্চ) সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে (বাহাদুর শাহ পার্কের সম্মুখে) ঢাকা ওয়াসার সাপ্লাই দেওয়া খাবার পানির লাইন থেকে একনাগাড়ে পানি বের হচ্ছে। সেই পানি আবার একপাশে ম্যানহোলের ফাঁকা দিয়ে ড্রেনে পড়ছে।
ফুটপাতে চায়ের দোকানি রিফাতুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রায় এক সপ্তাহ আগে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির সময় ওয়াসার পানির পাইপ ফেটে যায়। তখন থেকে পানি বের হতে থাকে। কেউ এটা ঠিক করেনি। এখানকার একজন অফিসে ফোন দিয়েছে, কিন্তু কাজ হয়নি।’
পুরান ঢাকার কলতাবাজার এলাকার বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘কয়দিন পরপর যেখানে রাজধানীজুড়ে ওয়াসার পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়, সেখানে এমন পানির অপচয় খুবই দুঃখজনক। দায়িত্বশীলদের গাফিলতির কারণে অবলিলায় হাজার হাজার লিটার পানির অপচয় হচ্ছে। দিনশেষে এর খেসারত সাধারণ মানুষকেই দিতে হয়।’
অনর্গল লিকেজ দিয়ে পানি বের হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী মো. তৈমুর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন আর ওয়াসার উচিত সবসময় সমন্বয় করে কাজ করা। তাদের খামখেয়ালির কারণে সাধারণ জনগণকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এখানে পাইপ লিকেজ হয়ে যেভাবে পানি বের হচ্ছে হিসাব করলে দেখা যাবে কয়েক লাখ লিটার পানি অপচয় হয়েছে। অথচ দায়িত্বশীলদের এখনও হুঁশ ফেরেনি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারি কাজ আর জনগণের সম্পদ এ দুটি জিনিসের প্রতি দায়িত্বশীলদের সবসময় অনিহা কাজ করে। তারা সবসময় হেঁয়ালি করে কাজ করে। সমস্যা সমাধানের জন্য বললে আজ নয়তো কাল, কাল নয়তো পরশু এমন করতে করতে মাস কেটে যায়। আমার মনে হয় এখনই সময়, যারা দায়িত্বে থেকে কাজের গাফিলতি করে তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা।’
লাইন লিকেজের বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার মডস্ জোন-১ এর একজন দায়িত্বশীল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, লাইন লিকেজের এমন অভিযোগ এই জোন অবগত নয়। আমরা সবসময় গ্রাহকদের সেবায় নিয়োজিত। তাদের যেকোনও সমস্যা আমরা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করি।
এদিকে সিটি করপোরেশনের ওপর দায় দিয়ে ঢাকা ওয়াসার মডস্ জোন-১ এর দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন যখন এক্সকেভেটর দিয়ে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে, তখন বিভিন্ন জায়গায় পানির লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু পানির লাইন না, গ্যাস টেলিফোনসহ অন্য যে লাইনগুলো আছে সেগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই যে লাইনের ক্ষতি হয়, তারা সেটা আমাদের জানায় না। উল্টো লিকেজ অবস্থায় মাটি চাপা দিয়ে দেয়। পরে সেই জায়গা থেকে পানি বের হয়, আর সব দোষ হয় ওয়াসার।’
এই প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘সিটি করপোরেশন ভাবে তারা রাজা আর আমরা সবাই প্রজা। তাদের কারণে প্রতিনিয়ত পানির অপচয় হচ্ছে। কিছুদিন আগেও এক জায়গায় এমন হয়েছে। পরে আমরা তার সমাধান করেছি। এই বিষয়টি যখন জানতে পেরেছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করবো।’