চট্টগ্রামে ওয়াসিম হত্যা: ১৫ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের পরোয়ানা

জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামের ওয়াসিম হত্যা মামলায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

প্রসিকিউশনের আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন।

ট্রাইব্যুনালে আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ, গাজী এমএইচ তামিম প্রমুখ।

এরআগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর ও মুরাদপুর এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্র-জনতার ওপর হামলা এবং গুলি চালায়। এ ঘটনায় ছাত্রদল কর্মী ওয়াসিম আকরাম, শিবিরকর্মী ফয়সাল আহমেদ শান্ত ও ফার্নিচার ব্যবসায়ী মো. ফারুক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়।

এছাড়া ১৮ জুলাই চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ছোড়া গুলিতে দোকান কর্মচারী সাইমন (১৪), আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রী কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর সিদ্দিকী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া (২২) নিহত হয়।

এই দুটি ঘটনায় করা মামলায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

আসামিদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রামের সাবেক দুই মেয়র আ জ ম নাসির ও রেজাউল করিম, তৎকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া উপ-কমিটির সদস্য নুরুল আজিম রনি রয়েছে জানা গেছে।

এ ছাড়া জুলাই আন্দোলনে রাজধানীর মোহাম্মাদপুরে অস্ত্র উঁচিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করে মানুষকে হত্যার ঘটনায় আনসার সদস্য ওমর ফারুককে কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

পরে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে জুলাই-আগস্টে গণহত্যা চলাকালে যে হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয়েছিল। এর সিংহভাগের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সরাসরি জড়িত ছিল। আমাদের তদন্ত সংস্থার কর্মীরা ফিল্ড ইনকোয়ারি করে, ভিডিও ফুটেজের লাইভ উইটনেস ও পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করেছে। এ রকম ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রামের সাবেক দুই মেয়র আ জ ম নাসির ও রেজাউল করিম, তৎকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনিসহ চট্টগ্রামের আওয়ামী, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে এর সম্পৃক্ততা পেয়েছে। আজ আমরা তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার জারির আবেদন করেছিলাম। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল ১৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছে।

এছাড়া আরও একজন আসামি যার নাম মো. ফিরাজ। যিনি কারাগারে আছেন। তিনিও ওই অভ্যুত্থানের সময় হামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি অন্য মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। তাকেও এ মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেছিলাম। আজ ট্রাইব্যুনাল সেটাও মঞ্জুর করেছে।

এর বাইরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় করা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুই সময় দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। ওই মামলার একজন আসামি যার নাম ওমর ফারুক। যিনি একজন আনসার সদস্য। তিনি ওই সময়ে একটি গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন মানুষকে দূর থেকে দৌড়ে কাছে এসে গুলি করে হত্যা করেন। সেই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ তাকেও কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।