মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্ট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে এই নির্দেশনা বাস্তাবায়ন করতে বলা হয়েছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে সোমবার (৯ মার্চ) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনেন ব্যারিস্টার মাহসিব হোসাইন।
শুনানি শেষে শিশুটির ছবি, ভিডিও ও পরিচয় শনাক্তকরণ সব বিষয়াদি দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও পুলিশ, সাইবার ক্রাইম ইউনিট, ডিবিসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি শিশুটি ও তার বোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুই জন সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা নিযুক্ত করতে বলা হয়েছে। ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলার তদন্ত সম্পন্ন এবং সংশ্লিষ্ট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ সময় আদালত আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা লিখে এসেছেন (লিখিত আবেদন আকারে), এতে ভালো হয়েছে। নয়তো আমাদের স্বপ্রণোদিত হয়ে আদেশ দিতে হতো। মূলত আমাদের (আদালতের) কাজ হলো বার্তা দেওয়া। দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে আদালত অপর আদেশে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারা অনুসরনের মাধ্যমে ভিকটিম ও পরিবারকে রক্ষা করতে বলেছেন।
আদালত বলেন, ‘মানুষকে জানাতে হবে, ১৪ ধারা অনুসারে কোনটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই ধারাটির প্রচারে কাজ করতে হবে যে, এসব করা যাবে না করলে শাস্তি হবে। ১৪ ধারায় বলা আছে, (১) এই আইনে বর্ণিত অপরাধের শিকার হয়েছেন এমন নারী বা শিশুর বিষয়ে সংঘটিত অপরাধ বা সে সম্পর্কিত আইনগত কার্যধারার সংবাদ বা তথ্য বা নাম-ঠিকানা বা অন্যবিধ তথ্য কোনও সংবাদপত্রে বা অন্য কোনও সংবাদমাধ্যমে এমনভাবে প্রকাশ বা পরিবেশন করা যাবে যাতে ওই নারী বা শিশুর পরিচয় প্রকাশ না পায়। (২) উপ-ধারা (১) এর বিধান লঙ্ঘন করা হলে এর জন্য দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের প্রত্যেকে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ডে বা অনূর্ধ্ব ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
আদেশ শেষে আদালত মন্তব্য করেন, ঘটনাটি নিয়ে আমাদের বলার কোনও ভাষা নেই, হয়ত থামাতে পারিনি। তবে ঘটনার পরের ঘটনা থামাতে কাজ করতে পারছি।
এদিকে এ ঘটনায় মামলা করেছেন শিশুটির মা। মামলার এজাহারে তিনি অভিযোগ করেন, স্বামীর সহায়তায় তার বাবা (শ্বশুর) শিশুটিকে ধর্ষণ করে। বিষয়টি মেয়ের শাশুড়ি ও ভাসুর জানতো। পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা চালায়। শনিবার (৮ মার্চ) সকালে বড় বোন ও বাবাকে দিয়ে মাগুরা সদর থানায় এজাহার পাঠান শিশুটির মা। সেই অনুযায়ী বেলা ৩টার দিকে মামলা রেকর্ড হয়।
মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৪)–এর ক/৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ করা হয়। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাসুরকে আসামি করা হয়েছে। তারা আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিল। পরে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।