সাঙ্গ হলো প্রাণের মেলা

সাঙ্গ হলো বইপ্রেমী ও দর্শনার্থীদের পদচারণামুখর মাসব্যাপী বাংলা একাডেমির বইমেলা। কাল থেকে শুরু হবে আবার অপেক্ষার প্রহর। এক বছর পর আবার এ মেলা প্রাঙ্গণে হয়তো দেখা হবে প্রিয়জন, স্বজন, পরিচিত জনের সঙ্গে। গল্প আড্ডায় মেতে উঠবে সবাই। স্মৃতি হাতড়ে চলবে স্মৃতিচারণ। আলোচনার মধ্যমণি হয়ে উঠবে কবিতা, ছড়া, উপন্যাস, ফিকশন-ননফিকশন আর দেশ-বিদেশের প্রেক্ষাপট নিয়ে রচিত হাজারো বই।

আজ শেষ দিনে রাজধানীসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে মেলায় এসেছেন হাজারো দর্শনার্থী। দুপুর থেকেই বইমেলার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়।

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) শেষ দিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, দর্শনার্থীদের কেউ ছবি তুলেছেন, কেউ বই কিনেছেন, আবার কেউ বন্ধুদের নিয়ে আড্ডায় মেতে আছেন। সবাই দিনটিকে উপভোগে ব্যস্ত ছিলেন।

এদিন ১১টায় বইমেলা শুরু হয়ে রাত ৯টায় শেষ হয়েছে। সমাপনী দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ৩৩৫টি। গত ২৮ দিনে বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩ হাজার ২৯৯টি।

বই খুঁটিয়ে দেখছেন পাঠকরা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

শেষ দিনে বইমেলায় আসা সবুজ মোল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবারের বইমেলা অনেকটা বেশি গোছানো ছিল। স্টলের সংখ্যাও বেশি ছিল। শেষ দিনে কয়েকজন প্রিয় লেখকের বই সংগ্রহ করেছি। আশা করি আগামীবার আরও সুন্দর মেলা হবে।

বইমেলায় দর্শনার্থীদের ভিড়

কথা হয় আরেক বইপ্রেমী রাব্বি হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবারের বইমেলা মনে হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেছে। আবার অপেক্ষায় থাকবো এক বছর। এবার ১৭টি নতুন বই সংগ্রহ করেছি। এর মধ্যে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান, বিশ্বরাজনীতিসহ বিভিন্ন গল্পের বই নিয়েছি।

মেলার দ্বিতীয় দিন (ছবি: সাজ্জাদ হোসেন)

জসীমউদদীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫ ও সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪

বইমেলায় বিভিন্ন বিষয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ কয়েকটি শ্রেণিতে লেখক-প্রকাশকদের পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমির ‘কবি জসীমউদদীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫’-এ ভূষিত হয়েছেন কবি আল মুজাহিদী এবং ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’-এ ভূষিত হয়েছেন অধ্যাপক হান্স হার্ডার ও কথাশিল্পী বর্ণালি সাহা। পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের পুরস্কারের অর্থ, সম্মাননাপত্র ও সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।

বই নিয়ে পাঠকদের আড্ডা (ছবি: ফোকাস বাংলা)

গুণিজন স্মৃতি পুরস্কার-২০২৫

অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়।

চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার: ২০২৪ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কথা প্রকাশকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৫ দেওয়া হয়।

বইমেলার স্টলে দাঁড়িয়ে বই দেখছেন দর্শনার্থীরা (ফাইল ছবি)

মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার: ২০২৪ সালে প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঠক সমাবেশ (প্লেটো: জীবন ও দর্শন-আমিনুল ইসলাম ভুইয়া), ঐতিহ্য (ভাষাশহীদ আবুল বরকত: নেপথ্য কথা- বদরুদ্দোজা হারুন) এবং কথাপ্রকাশকে (গোরস্তানের পদ্য: স্মৃতি ও জীবনস্বপ্ন-সিরাজ সালেকীন) মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫ দেওয়া হয়।

রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার: ২০২৪ সালে গুণমান বিচারে সর্বাধিক সংখ্যক শিশুতোষ বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কাকাতুয়াকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২৫ দেওয়া হয়।

স্টল ঘুরে ঘুরে বই দেখছেন দর্শনার্থীরা

২০২৫-এর বইমেলা নিয়ে সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মেহাম্মদ আজম বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি বইমেলার সমস্যাগুলো যথাসম্ভব দূর করার। আমরা কিছু ক্ষেত্রে সফল হয়েছি, কিছু ক্ষেত্রে পারিনি। আগের তুলনায় প্রকাশক সংখ্যা বেড়েছে।

বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ভাষা আন্দোলনের চেতনাবহ ফেব্রুয়ারি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অমর একুশে বইমেলা ভাষা শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখার একটি মাধ্যম।