শিশুদের প্রতি যৌন, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন প্রতিরোধে ‘শিশু আইন-২০১৩’ এর বিধিমালা দ্রুত প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, শিশুর সুরক্ষায় আইনগত কাঠামো শক্তিশালী করা, শিশু কল্যাণ বোর্ডের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং শিশু অধিদফতরের বাস্তবায়ন জরুরি।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর সিরডাপ অডিটোরিয়ামে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) আয়োজিত ‘শিশু যৌন শোষণের বিরুদ্ধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সভায় আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. রোকনুজ্জামান শিশু যৌন শোষণ প্রতিরোধে আইন ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন। তিনি জানান, শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে শিশু আইন ২০১৩; দণ্ডবিধি, নারী ও শিশুর প্রতি নিপীড়ন প্রতিরোধ আইন; বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ আইনসহ বেশ কয়েকটি আইন রয়েছে।
এতে বলা হয়, ২০২৪ সালে ২৩৪ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। এর মধ্যে ১৯৭টি মামলা হয়েছে। এছাড়া ৯০টি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। তবে মাত্র সাতটি ঘটনায় মামলা হয়েছে।
সভায় বক্তারা বলেন, শিশু সুরক্ষায় আইন প্রয়োগের পাশাপাশি আইনি সহায়তা বাড়ানো জরুরি। বর্তমানে অনেক শিশু আইনি সহায়তার অভাবে বিচারের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিশু কল্যাণ বোর্ড গঠন করা হলেও তা কার্যকরভাবে কাজ করছে না। এতে শিশুরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতন শুধু শারীরিক ক্ষতির কারণ নয়, এটি তার মানসিক বিকাশেরও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অনেক সময় শিশুরা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে নিজেদের অবাঞ্ছিত বা মূল্যহীন মনে করে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
শিশুদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, শিশুরা কী করছে, কোথায় যাচ্ছে, কাদের সঙ্গে মেলামেশা করছে– এসব বিষয়ে অভিভাবকদের নজরদারি রাখা উচিত। এছাড়া শিশুরা ইন্টারনেট ব্যবহারে কতটা সচেতন, তারা পর্নোগ্রাফির মতো ক্ষতিকর কনটেন্টের সংস্পর্শে আসছে কিনা এ বিষয়েও অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে।
বক্তারা শিশু সুরক্ষায় বিদ্যমান আইনগুলোর আরও কার্যকর প্রয়োগ, অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তারা বলেন, শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আইনি কাঠামো শক্তিশালী করার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ।
আসক’রনারী ও শিশু অধিকার রক্ষায় জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তাদের পরিচালিত ‘স্টেপিং আপ দ্য ফাইট এগেইনস্ট সেক্সচুয়াল এক্সপ্লয়টেশন অব চিলড্রেন’ প্রকল্পটি টেরে ডেস হোমস, নেদারল্যান্ডসের অর্থায়নে অনলাইন ও অফলাইনে শিশু যৌন শোষণ প্রতিরোধে কাজ করছে।
শিশু সুরক্ষায় সরকারের উদ্যোগ ও করণীয় নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজ তানিয়া খান বলেন, শিশু যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রকাশ্যে আনা জরুরি। পরিবার ও সমাজ একে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে, যা অপরাধীদের উৎসাহিত করে। শুধু কন্যাশিশুরাই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে ছেলে শিশুরাও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। শিশু সুরক্ষায় ও আইনি সহায়তা বৃদ্ধিতে সরকার ডিএনও টেস্ট ল্যবরোটারিকে আরও কার্যকর করার উদ্যোগ নিয়েছে।
আসক’র নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও উপদেষ্টা মাবরুক মোহাম্মদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও ছিলেন– বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি এম সাখাওয়াত হোসেন, মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের সহকারী পরিচালক নার্গিস সুলতানা (জেবা) ও বিশ্বজিৎ দাস, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সিনিয়র সহকারী পরিচালক জাহিদ হোসেন চৌধুরী, টেরে ডেস হোমসের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাহমুদুল কবির প্রমুখ।