বর্তমানে সাইবার অপরাধীদের অন্যতম টার্গেট ‘নারী’

সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে নারীর শিক্ষা ও কাজের পরিধি। তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন পেশা, ব্যবসা ও আয়ের নতুন ক্ষেত্র, যা নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু এর একটি নেতিবাচক দিক হলো ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বাড়ছে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি ও সহিংসতা। সরাসরি ভুক্তভোগী হচ্ছেন রাজনৈতিক অধিকারকর্মী, অভিনেত্রী, কবি ও লেখক, সরকারি কর্মকর্তা, ক্রীড়া ব্যক্তিত্বসহ সাধারণ ও প্রান্তিক নারীরা।

গবেষণাভিত্তিক অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান ভয়েসেস ফর ইন্টারঅ্যাকটিভ চয়েস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট, ভয়েসের আয়োজনে ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীর প্রতি সহিংসতার সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহ প্রকাশ’ শীর্ষক এক তথ্যবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ভয়েসের ‘পাওয়ার: প্রমোটিং উইমেনস ইকুয়ালিটি অ্যান্ড রাইটস’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে এ সভার আয়োজন করা হয়। 

সভায় বক্তারা বলেন, ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই প্রাথমিক পর্যায়ে বুঝতে পারেন না কী করবেন বা কোথায় গেলে প্রতিকার পাবেন এবং অভিভাবক বা পরিচিতজনকেও জানাতে চান না। অন্যদিকে যে ভুক্তভোগীরা মামলা করেন, তারা সঠিক বিচার পান না। যার ফলে অনেকেই আত্মহননের মতো পথ বেছে নেন।

সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ভয়েসের প্রকল্প ব্যবস্থাপক, প্রমিতি প্রভা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যেসব নারী কোনও আদর্শগত কাজে জড়িত, যেমন- সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মী, অথবা নিজ নিজ কার্যক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখছেন, তারা সাইবার আক্রমণের শিকার বেশি হচ্ছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নারী সমন্বয়ক এবং সাধারণ নারী যারা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের প্রতি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক হয়রানিমূলক আচরণ পরিলক্ষিত হয়। যা তাদের বাস্তব জীবনেও চরম প্রভাব ফেলেছে। তাই সরকার পরিবর্তনের পর অনেকেই অনলাইনে রাজনৈতিক মতাদর্শের চর্চা এবং বাকস্বাধীনতার প্রয়োগ থেকে বিরত আছেন। এছাড়া এসব নারীরা অনলাইনে আরও বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হন, যার মধ্যে তাদের আদর্শ, জীবনযাত্রা বা পেশগত কারণে লজ্জিত ও দোষী সাব্যস্ত করা এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপতথ্য প্রচার উল্লেখযোগ্য।’

সভার আলোচনায় আরও উঠে আসে যে, সাইবার স্পেসে নারীদের হয়রানির সমাধানকল্পে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনে গত সাড়ে তিন বছরে (২০২৪ সালের মে পর্যন্ত) সাইবার অপরাধের শিকার ৬০ হাজার ৮০৮ জন নারী প্রতিকার চেয়েছেন। সাইবার স্পেসে ভুক্তভোগী এসব নারীর ৪১ ভাগই ডক্সিংয়ের শিকার হয়েছেন। এছাড়া ১৮ ভাগ ফেসবুক আইডি হ্যাক, ১৭ ভাগ ব্ল্যাকমেইলিং, ৯ ভাগ ইমপার্সোনেশন, ৮ ভাগ সাইবার বুলিংজনিত সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করেছেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন টেলিভিশন, পত্রিকা ও অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিকরা। প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ওপর তারা জোর দেন। এছাড়াও পুলিশের সাইবার সাপোর্ট সেন্টারে কর্মরত ব্যক্তিদের জেন্ডার সংবেদনশীলতা বিষয়ক প্রশিক্ষণের আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

উল্লেখ্য, গত বছর আগস্টে সরকার পতনের পর, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনে, নারীর বিরুদ্ধে সাইবারক্রাইমের সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিযোগ দাখিল হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ । তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তির মাধ্যমে যৌন হয়রানি মোকাবিলার অন্যতম হাতিয়ার হলো জনসচেতনতা। অনলাইন সহিংসতার বিভিন্ন ধরন, এর প্রভাব এবং সম্পৃক্ত আইন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে সামাজিকমাধ্যমে প্রচারাভিযান, কর্মশালা এবং সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম চালানো জরুরি। ভুক্তভোগীদের কণ্ঠস্বরকে প্রাধান্য দিয়ে অনলাইনে যৌন সহিংসতার ক্ষতিকর প্রভাব সর্ম্পকে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। ভুক্তভোগীদের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যকে সহজলভ্য করতে হবে।’