বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারসহ ২৫ কর্মকর্তার নামে সেফ ডিপোজিট লকার খুঁজে পায়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) লকারগুলোতে অভিযান শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন দুদকের পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জমান। দুপুরে দুদকের আট সদস্যের একটি টিম বাংলাদেশ ব্যাংকে লকারে তল্লাশি চালায়।
কাজী সায়েমুজ্জমান বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে যে ২৫ জনের লকার খুজতে এসেছিলাম, তাদের নামে কোনও লকার নেই। আরও অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। আদালতের অনুমোদনের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে অভিযানে আসবে দুদক।’
তিনি বলেন, ‘এই অভিযোগ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাই। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অনেকেই এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকে বহাল এবং অনেকেই সাবেক কর্মকর্তা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খুলনা, বরিশাল ও ঢাকাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক কর্মরত। ২৭২টি সেফ ডিপোজিট লকারের সন্ধান পাওয়া যায়।’
অভিযুক্ত ২৫ কর্মকর্তা হলেন— সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোরশেদ আলম, সাবেক উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাসের, বিএফআইইউ সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস, সাবেক ডেপুটি গভর্নর কাজী সাইদুর রহমান, ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, পরিচালক মো. সারোয়ার হোসেন, যুগ্ম পরিচালক (চট্টগ্রাম) সুনির্বাণ বড়ুয়া, যুগ্ম পরিচালক (চট্টগ্রাম) জোবাইর হোসেন, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের অনিক তালুকদার, রুবেল চৌধুরী, লেলিন আজাদ পলাশ, অতিরিক্ত পরিচালক মো. আবদুর রউফ, অতিরিক্তি পরিচালক মো. মঞ্জুর হোসেন খান, জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ইমাম সাঈদ, সাবেক নির্বাহী পরিচালক এসএম মনিরুজ্জামান, যুগ্ম পরিচালক মো. ওয়াদুদ, সাবেক উপ-পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন, সাবেক সহকারী পরিচালক (ক্যাশ) আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেইনিং অ্যাকাডেমির সহকারী পরিচালক আমিরুজ্জামান মিয়া, সাবেক ডিজিএম তরুণ কান্তি ঘোষ, সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম, ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান, সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও বিএফআইইউ’র একজন অতিরিক্ত পরিচালক। কর্মকর্তাদের দেওয়া তালিকায় তার নাম দেওয়া নেই।
সে সময় দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, ‘দুদকের দল এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযান পরিচালনা করছে। আমাদের টিম মনে করছে, লকারে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ, বিদেশি অর্থ, স্বর্ণালংকার থাকতে পারে। প্রায় ৩০০ লকার রয়েছে সেখানে। আজকে যতটুকু পারেন করবেন। প্রয়োজনে আরও দুই-একদিন সেখানে অভিযান চলতে পারে।’
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ৩০০ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এসব সুরক্ষিত লকারে তাদের বিভিন্ন সম্পদ ও মূল্যবান কাগজপত্র সংরক্ষণ করেছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন বলে মনে করছে দুদক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, দুদকের দলটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারেন্সি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক আমিনুল ইসলাম আকন্দের রুমে যান। তিনি বলেন, ‘দুদকের টিমটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২৫ কর্মকর্তার লিস্ট নিয়ে এসেছেন। তারা কারেন্সি ডিপার্টমেন্টে লকারের নিয়ে লেজার খাতায় কোনও তথ্য পাননি।’
অভিযানের সুবিধার্থে ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, এসব লকারে কর্মকর্তাদের জ্ঞাত আয়ের উৎসের বাইরে কোনও সম্পদ পাওয়া গেলে অনুসন্ধান শুরু করবে দুদক। বড় অংকের সম্পদ মজুদ রয়েছে এমন সন্দেহে সম্প্রতি এসব লকার খোলার জন্য আদালতের অনুমোদন পেয়েছে দুদক। লকার খোলার বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠিও পাঠিয়েছে দুদক।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিকিউরিটি ভল্টে ব্যাংক কর্মকর্তাদের অর্থ ও সম্পদ রাখার জন্য ব্যবহৃত তিন শতাধিক গোপন লকার শনাক্ত করে দুদক। লকারগুলো বর্তমান ও প্রাক্তন সিনিয়র এবং ভিআইপি কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত বলে জানা গেছে।
অভিযানে সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীর গোপন লকারে অভিযান চালিয়ে পাঁচ কোটি টাকারও বেশি দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়। এর পেক্ষিতে দুদকের পক্ষ থেকে আদালতের কাছে আবেদন করেন এই সমস্ত লকার খুলে দেখার।
আদালতের কাছে দুদকের আবেদনে বলা হয়, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার অর্থ-সম্পদ ও অন্য মূল্যবান নথিপত্র সেফ ডিপোজিট আকারে রেখেছেন বলে তাদের ধারণা হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার নামেও লকার রয়েছে।