শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে সাত দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় দাবিতে আন্দোলনরত তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে ১০টার দিকে প্রায় ৬ ঘণ্টা পর মহাখালী রেলক্রসিং ছেড়ে ক্যাম্পাসের দিকে চলে যান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এর আগে রাত সাতে ৮টার দিকে তিতুমীর কলেজের শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধির একটি দলের সঙ্গে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই জন যুগ্ম সচিব আব্দুর রহমান ও নুরুজ্জামানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শিক্ষার্থীদের সাত দফার দাবির মধ্যে কয়েকটি দাবি মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে মহাখালী রেলক্রসিং এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামানের উপস্থিতিতে তিতুমীর কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক শিপ্রা রাণী মন্ডল অনশনরত শিক্ষার্থীকে প্যাকেটজাত আমের জুস পান করিয়ে দিতে দেখা যায়।
তবে বিষয়টি তার এখতিয়ারে নয় বলে শিক্ষার্থীদের জানান অধ্যক্ষ।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী নায়েক নূর মোহাম্মদ বলেন, আমরা আন্দোলন সাত দিনের জন্য স্থগিত করছি। মন্ত্রণালয় যেসব আশ্বাস দিয়েছে তা বাস্তবায়নে কার্যকর অগ্রগতি না দেখলে আগামী সপ্তাহে আমরা আবারও আন্দোলনে নামবো।
একইসঙ্গে, উপস্থিত যুগ্ম সচিবকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীরা আগামী ৭ দিনের মধ্যে তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা প্রণয়ন করার দাবি জানান। এর উত্তরে যুগ্মসচিব বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করা হবে, এমন আশ্বাস দেন।
এ সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশের বলেন, শিক্ষার্থী তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর করাসহ সাতদফা দাবিতে গত কিছুদিন ধরে অনশন ও আন্দোলন করছেন। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি জনসাধারণের ভোগান্তি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ বিকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কয়েকজন উপদেষ্টাসহ একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের যেসব যৌক্তিক দাবি রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যুগ্ম সচিব নুরুজ্জামান বলেন, তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা সম্ভব নয়। তবে তাদের অন্যান্য দাবিগুলোর মধ্যে শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা, শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন বাড়ানো, আবাসিক বাসভবনে জন্য জমি কেনা এবং ১৫১ জন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়াও তাদের অন্য দাবিগুলো পর্যালোচনা করা হবে বলেও জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. নুরুজ্জামান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতির দাবি বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত সরকার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে এর আগে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, কলেজ কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি কলেজের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তবে বাকি ছয় দফায় যেসব বিষয় রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
পরে তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী লায়েক নুর মোহাম্মদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এই মুহূর্তে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমাদের অনুরোধ করেছেন। কারণ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি দিলে অন্য কলেজগুলোও আন্দোলনে নেমে যাবে। তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সরকারের জন্য কঠিন হবে। তাই আমরা নির্বাচিত সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতির জন্য অপেক্ষা করবো।
এরআগে, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, কলেজ কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে জানিয়ে লায়েক নুর মোহাম্মদ বলেন, এ কমিটি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি কার্যক্রম ও কলেজ পরিচালনা করবে। আমরা কি এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে সবাই একমত- প্রশ্ন করে সবার মতামত চান তিনি। পরে শিক্ষার্থীরা ‘হ্যাঁ’ বলে সাড়া দেন।
রাত পৌনে ১০টায় তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীরা সড়ক ছাড়ার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এছাড়া প্রায় ছয় ঘণ্টা বন্ধ থাকা রেলপথও সচল হয়। পরে আটকে থাকা দুইদিকের ট্রেনই চলাচল করতে দেখা যায়।