সায়েন্স ল্যাব মোড়ে ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের অবরোধ, ভোগান্তি চরমে

স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরুদ্ধ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে চতুর্মুখী সড়কে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে গেছে। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিস-ফেরত কর্মজীবী, নারী-শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। 

রবিবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে শতাধিক শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করেন। এতে সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত মোড় ও এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর রোডসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে সড়কে আটকে থাকার পর অনেকেই পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, আজ (রবিবার) বিকালে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবির অগ্রগতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মামুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। এর জেরে শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সায়েন্স ল্যাবে সড়ক অবরোধ করেন।

সড়ক অবরোধ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অহেদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের পাঁচ দফা দাবি মানতে হবে। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আমাদের কাছে এসে ক্ষমা চাওয়া আগ পর্যন্ত আমরা সড়ক ছাড়বো না।’ প্রয়োজনে লাগাতার আন্দোলন করার হুঁশিয়ারও দেন এই শিক্ষার্থী।

দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকা চার সড়কের যাত্রীরা

জনভোগান্তি সৃষ্টি না করে আন্দোলন করা যায় কিনা, জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জহিরুল আমিন বলেন, আমরা গত ৫ জানুয়ারিতে আমাদের পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছি। এরপর থেকে আমরা বিভিন্নভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছি। অথচ দাবি মেনে না নিয়ে প্রো-ভিসি আমাদের সঙ্গে খুবই খারাপ আচরণ করেছের। এখন সড়ক অবরোধ করা ছাড়া আমাদের কাছে কোনও বিকল্প নেই। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ঘোষণাও দেন বিক্ষোভকারীদের সমন্বয়ক জহিরুল।

এসময় শিক্ষার্থীরা ‘প্রো-ভিসি তুই ক্ষমা চাবি, পাঁচ দফা মেনে নিবি‘, ‘এক দুই তিন চার, প্রো-ভিসি তুই স্বৈরাচার’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, সাত কলেজের অ্যাকশন’, ‘স্বৈরাচারী আচরণ মানি না, মানবো না’, ‘শিক্ষা নিয়ে সিন্ডিকেট মানি না, মানবো না’, ‘শিক্ষা সিন্ডিকেট, একসঙ্গে চলে না’, ‘জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো’, ‘প্রো-ভিসির গদিতে, আগুন জ্বালাও একসাথে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

রাত ৯টায় সায়েন্স ল্যাব মোড়ে গিয়ে দেখা যায় সেখানে অবস্থান জারি রেখেছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের আন্দোলনের প্রভাবে আশপাশের সিংহভাগ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে আছে। প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে সড়ক অবরোধ করে রাখায় জনসাধারণ চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এসব সড়ক দিয়ে কোনও যানবাহন চলতে দিচ্ছে না শিক্ষার্থী। তবে শুধু জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স যেতে দেওয়া হচ্ছে।

দাবি মানা না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

দীর্ঘ সময় আটকে থাকা মৌমিতা বাসের স্টাফ মো. কবির বলেন, তারা (শিক্ষার্থীরা) ঠিক আছে। মাঝখান থেকে ভোগান্তি আমাদের। আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষের পেটে লাথি। আজকে চার দিন পর গাড়ি পাইছি। ঘরে বাজার নাই, আয় না করতে পারলে বউ-বাচ্চা না খায়া থাকবো। 

রজনীগন্ধা বাসের চালক হানিফ বলেন, ‘আমরা দুদিন পরপর বাস চালাতে পারি। আমরা দিন আইনা দিন খাই। দুই দিন পর আজকে ইনকাম করার সুযোগ পাইছি। ঘরে বাজার নিবো কেমনে! যেকোনও আন্দোলন হলেই রাস্তা দখল করে। তাদের তো কোনও সমস্যা নাই। পেটে লাথি পড়ে আমাগো মতো খেটে খাওয়া মানুষগুলার।’

বিক্রয় প্রতিনিধি আল-আমিন বলেন, ‘আন্দোলন আর শেষ হইলো না। দেশটা মনে হচ্ছে মামার বাড়ির আবদার হয়ে গেছে। যার যখন ইচ্ছা রাস্তাঘাট বন্ধ করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। সেই আসাদগেটে ১ ঘণ্টা বসে থেকে বাস থেকে নেমে হাঁটা ধরেছি। ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করার পরে আর হাঁটা যায়? কিন্তু কিচ্ছু বলার নাই। আল্লাহর কাছে বলে রাখলাম, আল্লাহ ছাড়া এর বিচার আর কারও কাছে দেওয়ার নাই। এই জন্যই কি দেশ আরেকবার স্বাধীন করেছিলাম?’

এদিকে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানী টেকনিক্যাল মোড় ও পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার সড়ক আটকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন বলেও জানা গেছে।