এইচএমপিভি নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দরে বিশেষ নির্দেশনা

চীনসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আতঙ্ক ছড়ানো হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) আক্রান্ত রোগী এবার বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়ায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম দেশের সব এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নির্দেশনার বিষয়ে চিঠি প্রদান করেন।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের বিশেষ ওই নির্দেশনায় বলা হয়, সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার নির্দেশনা অনুযায়ী বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সবাইকে এইচএমপিভির বিষয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আপাতত আতংকিত হওয়ার কিছু হয়নি। বিমানবন্দরের যাত্রী, স্টাফ ও দর্শনার্থীদের সবাইকে মুখে মাস্ক রাখা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়েছে। যদি কারও মধ্যে জ্বর, কফ, শ্বাস ছোট হওয়ার মতো এইচএমপিভির লক্ষণ দেখা দেয় সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দরের হেলথ সার্ভিসে জানাতে হবে।

দেশের বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনাকারী দেশি ও বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এবং যেসব দেশে এইচএমপিভির আক্রান্ত রোগী রয়েছে সেসব দেশ থেকে যাত্রী আনার ক্ষেত্রেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্লেনের ভেতর যদি কারও মধ্যে জ্বর, কফের মতো এইচএমপিভির লক্ষণ দেখা দেয় সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দরের হেলথ সার্ভিসে জানাতে হবে।

ফ্লাইটে এইচএমপিভির আক্রান্ত রোগী থাকলে তাদের কীভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে সে বিষয়ে এয়ারলাইন্সের ক্রু ও যাত্রীদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশনাবলী জানার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও চিঠিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের জারি করা ৭টি নির্দেশনা মানতে বলা হয়েছে। সেগুলো হলো- শীতকালীন শ্বাসতন্ত্রের রোগগুলো থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার করা। হাঁচি/কাশির সময় বাহু/টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা। ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার বুড়িতে ফেলা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলা। আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা। ঘনঘন সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলা (অন্তত ২০ সেকেন্ড সময় ধরে)। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ না ধরা। জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকা। প্রয়োজন হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রবিবার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে এইচএমপিভি আক্রান্ত ব্যক্তি একজন নারী, যার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকায়। চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে পূর্ব-এশিয়ার দেশ চীনে প্রথম এর সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর জাপানে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। এখন এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাব মালয়েশিয়া ও ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছে।

হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস, সংক্ষেপে যা এইচএমপিভি নামেও পরিচিতি। এই ভাইরাস নতুন কিছু নয়। ২০০১ সালে দেশে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর একাধিকবার নিউমোনিয়া উপসর্গ থাকা বিভিন্ন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করেও পাওয়া গেছে এই ভাইরাস। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের রোগের ন্যায় ফ্লু-এর মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে। যা সাধারণত ২-৫ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তাই আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নাই। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হলো। এখন পর্যন্ত বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাসের বিষয় কোনও সতর্কতার কথা জানায়নি।