অন্তর্বর্তী সরকারও আগের সরকারের পথে হাঁটছে: আনু মুহাম্মদ

গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, স্বৈরশাসনের পতন হয়েছে ঠিকই, তবে আমরা বুঝতেই পারছি না যে স্বৈরশাসনের পতন হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর সবাই বলছে- পরিবর্তন হবে, নতুন বাংলাদেশ গঠন করা হবে, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ হবে- এ সমস্ত কথাবার্তা শুনছি। কিন্তু কাজকর্মে তার কোনও প্রতিফলন দেখা যায় না। এখন পান্থকুঞ্জ পার্কের প্রকল্প বাতিল নিয়ে এই সরকারের উপদেষ্টা বলেন, ওই সরকারের করা প্রকল্প বাতিল করা সম্ভব না। এটা কেমন কথা! আগের সরকারের কোনও প্রজেক্ট যদি সংশোধন বা বাতিল করা নাই যায়, তাহলে কী পরিবর্তন হলো, কিসের নতুন বাংলাদেশ হলো? গণঅভ্যুত্থান করে আপনাদের সরকার বানানো হয়েছে কেন? 

শনিবার (১১ জানুয়ারি) বিকালে রাজধানীর কাওরান বাজার এলাকার পান্থকুঞ্জ পার্কে এক নাগরিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। ‘পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল ধ্বংস করে কাওরান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত চলমান এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সংযোগ সড়ক বাতিলের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচির ৩০তম দিনে’ নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করে “বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন”।

IMG_20250111_153321(1)অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশে আমরা কতটা ভয়ংকর অবস্থার মধ্যে আছি। একটা খেলার মাঠ, পার্ক এমনকি একটা ছোট উদ্যান রক্ষা করা জন্য আমাদের দিনের পর দিন আন্দোলন করতে হয়। এরপরও রক্ষা করা যায় না, কত আইনের জটিলতা তৈরি হয়। বিগত সরকার ঢাকাসহ সারদেশ ধ্বংস করে বিভিন্ন প্রজেক্ট তৈরি করেছে। তারা উন্মুক্ত করে দিয়েছিল যে যত প্রজেক্ট আনতে পারেন আনেন, সেই সঙ্গে অর্থ কোথা থেকে ঋণ পাওয়া যাবে। সরকারকে শুধু কমিশন দিতে হবে। তারা আমাদের দেশের জন্য, দেশের বাচ্চাদের জন্য কিছু করে নাই। এসব কারণে সেই সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ থেকে স্বৈরশাসনের পতন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ে সরকার এবং বর্তমান সরকারে সবাই সবসময় বলে, সরকারের একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব না। নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। এটা একটা আত্মঘাতী কথা হিসাবে আমরা সব সময় শুনি। যখন নাগরিকরা এগিয়ে আসে, তখন তারা খুবই ক্ষুব্ধ হয়। তখন নাগরিকদের ওপর হামলা চালায়। দিনের পর দিন বছরের পর বছর নাগরিকরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেও কোনও সমাধান পান না। তাহলে এটা কী শুধু কথার কথা বলা হয়। এই পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষায় আজ এক মাস ধরে তারা আন্দোলন করছেন। অথচ এখনও তাদের দাবি মানা হচ্ছে না। গত সরকারের সময়ে দেখেছি, নাগরিকরা ন্যায্য কোনও বিষয়ে আন্দোলন করেছে– তাদের খুন, গুম ও বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা চাই, এই ৩০ দিন যাতে আরও ৩০ দিনে না যায়। এরআগেই যাতে পান্থকুঞ্জ পার্কে প্রাণঘাতী প্রকল্প বাতিল করে পার্ককে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

গাছ রক্ষা আন্দোলনের অবস্থান কর্মসূচির ৩০তম দিনে নাগরিক সমাবেশে আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজীবের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন— গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, নারী অধিকারকর্মী শিরিন হক, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, বাংলাদেশ প্লানার্সি ইনস্টিটিউট সাধারণ সম্পাদক আক্তার মাহমুদ, পরিবেশ আন্দোলনে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ও বৃক্ষপ্রেমী আব্দুল ওয়াহিদ সরদার।

এসময় নাগরিক সমাবেশে গাছ রক্ষা আন্দোলন এবং পান্থকুঞ্জ প্রভাতী সংঘসহ কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠনের সদস্যরা এবং স্থানীয় বাসিন্দারা অংশগ্রহণ করেন।

নাগরিক সমাবেশে বক্তারা বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্যে পান্থকুঞ্জ পার্কের প্রায় ৪০ প্রজাতির দুই হাজার গাছ উদ্ভিদ ধ্বংস করা হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের একটি র‍্যাম্প পান্থকুঞ্জ পার্কের বুক চিরে কাওরান বাজার গোল চত্বরের দিকে নামানো হবে এবং আরেকটি সংযোগ সড়ক পান্থকুঞ্জ পার্ক হয়ে পলাশী পর্যন্ত যাবে, যেখানে কাওরান বাজার মোড়ে বর্তমান পরিস্থিতিতেই অসহনীয় যানজটের মুখোমুখি হতে হয়। একইসঙ্গে এই সড়ক কাওরান বাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত বিদ্যমান রাস্তার উপযোগিতাও নষ্ট করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিবেশ বিনষ্ট করার পাশাপাশি এই প্রকল্প তার আশেপাশের এলাকায় যানজট বাড়াবে। হাতিরঝিল জলাধার ও পান্থকুঞ্জ পার্ক ধ্বংস করে পলাশী পর্যন্ত চলমান এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে র‍্যাম্প নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বাতিল করে পার্কে আগের অবস্থান ফিরিয়ে দেওয়া দাবি জানান তারা।