বাংলাদেশ ছাড়াও যেসব সরকারি কর্মচারীর অন্য দেশের নাগরিকত্ব বা দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তথ্য গোপন করে দ্বৈত নাগরিকত্ব নেওয়া ওইসব সরকারি কর্মচারীর তথ্য চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) প্রধান এবং ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দিয়েছে দুদক।
বুধবার (১ জানুয়ারি) বিকালে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।
এসব দফতর-অধিদফতরকে দেওয়া চিঠিতে দুদক বলেছে, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে কতিপয় দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মচারী তথ্য গোপন করে বাংলাদেশ ব্যতীত ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট গ্রহণ ও ব্যবহার করছেন। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে শাস্তি অথবা আইনগত পদক্ষেপ এড়ানোর লক্ষ্যে তারা ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে সেসব দেশে অবস্থান করছেন। এসব সন্দেহভাজন ব্যক্তি এভাবে নিজেদের আইনি পদক্ষেপ থেকে রক্ষা করাসহ অপকর্ম ঢেকে রাখার প্রয়াস চালাচ্ছেন। এসব ক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশের পাশাপাশি একইসঙ্গে অন্য দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করে থাকেন। অথচ, তাদের এমন কার্যকলাপ সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪০ ধারার সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
চিঠিতে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালিত বিভিন্ন অনুসন্ধানের সময় এ মর্মে তথ্য পাওয়া গেছে যে, সরকারি কর্মচারীদের এমন একাধিক পাসপোর্ট নেওয়ার মূল লক্ষ্যই হলো বাংলাদেশে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত তাদের অবৈধ সম্পদ গোপন করে বিদেশে পাচার ও ভোগ করা। তাদের এমন কার্যকলাপ দেশে দুর্নীতির প্রসারে ভূমিকা রাখছে এবং দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তাছাড়া, ভিন্ন একটি দেশে নাগরিকত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের সরকারি চাকরির নৈতিক দায়-দায়িত্বের প্রতি তাদের অনাগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। যা কোনোক্রমেই বাঞ্ছনীয় নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দণ্ডবিধির ২১ ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ২ নম্বর ধারা এবং ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ১১০ ধারাসহ সংশ্লিষ্ট অন্য সব আইন অনুযায়ী প্রতিরক্ষা বিভাগে কর্মরত সব কমিশন্ড অফিসার, আদালতে কর্মরত কর্মচারী ও বিচারক, সরকারি রাজস্ব খাত থেকে বেতনভুক্ত সব কর্মচারী, স্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত, আধা-সরকারি বা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিতে কর্মরত সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বিবেচিত হন। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় গণকর্মচারী অথবা তাদের পোষ্যরা দ্বৈত নাগরিকত্ব নেওয়ার বিষয়ে আপনার দফতরে রক্ষিত তথ্যাদি পর্যালোচনা করা খুবই জরুরি।
এ অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে দ্বৈত নাগরিকত্ব নেওয়া পাবলিক সার্ভেন্টদের পাসপোর্ট ও এতদসংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্য পাঠানোর জন্য দুদকের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়।