কবে শুরু হবে ‘বিদ্রোহী চত্বর’ নির্মাণ

কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী চেতনা এবং ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের দ্রোহের চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ধানমন্ডি লেকে ‘বিদ্রোহী চত্বর’ (রেবেল স্কয়ার) তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্রোহী চত্বর নির্মাণের জন্য টেন্ডার হয়ে গেলেও কিছু প্রশাসনিক জটিলতায় আটকে আছে কাজ। জটিলতা শেষ হলেই শুরু হবে চত্বর নির্মাণ।

কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক লতিফুল ইসলাম শিবলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ধানমন্ডি লেকে ৬০ কাঠা জায়গার ওপর বিদ্রোহী চত্বর নির্মাণ করা হবে। এর জন্য একটি নকশাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। আমরা তিন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে এ বিষয়ে মিটিং করেছি। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি আমরা বিদ্রোহী চত্বর নির্মাণ করতে যাচ্ছি।’

কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কিছু প্রশাসনিক জটিলতা রয়েছে। এখানে জমি নিয়ে বিরোধ আছে। সিটি করপোরেশন বলছে ওটা তাদের জমি, আবার গণপূর্ত বলছে তাদের। জমি সংক্রান্ত বিরোধ মিটি গেলেই কাজ শুরু হবে। চত্বর নির্মাণের জন্য অলরেডি টেন্ডার হয়ে গেছে।’

ধানমন্ডি লেকে বিদ্রোহী চত্বর কোথায় হবে বা এই চত্বর রবীন্দ্র সরোবরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে কিনা এমন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে। ধানমন্ডির একজন বাসিন্দা রাহাত শিকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এর আগে সিটি করপোরেশন রবীন্দ্র সরোবরের আদলে নজরুল সরোবর তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। এবার এই বিদ্রোহী চত্বর ঠিক কোন জায়গায় হবে তা আমাদের কাছে সুস্পষ্ট নয়।’

ধানমন্ডি লেকে অবস্থিত রবীন্দ্র সরোবরের সঙ্গে এর কোনও সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শিবলী বলেন, ‘না, রবীন্দ্র সরোবরের জায়গায় রবীন্দ্র সরোবর থাকবে। ওটার সঙ্গে এটার কোনও সম্পৃক্ততা নেই। বিদ্রোহী চত্বর হবে লেকের পশ্চিম দিকে আবাহনী মাঠের ওপাশে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ধানমন্ডি লেক পাড়ের এই বিদ্রোহী চত্বর দেশের তারুণ্যকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেবে, ব্রিটিশ থেকে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ- কেউ আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

এদিকে বিদ্রোহী চত্বর নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত তরুণ প্রজন্ম। বিশেষ করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্যের শিক্ষার্থী মাহবুব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতা বরাবরই তরুণ প্রজন্মকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার শক্তি যোগায়। চব্বিশের ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানে সেটা অন্যরকম এক স্পিরিট এনেছে।’

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘নজরুল এদেশে সব সময় অবহেলিত। কবি নজরুল ইনস্টিটিউট এতদিন ছিল নামমাত্র। তাদের তেমন লক্ষণীয় কাজ চোখে পড়েনি। নজরুল নিয়ে এমন কিছু আরও অনেক আগে করা উচিত ছিল। আমি চাই শিগগিরই বিদ্রোহী চত্বর নির্মাণ হোক। নজরুল ইনস্টিটিউটের প্রতি আহ্বান, নজরুলকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিন এবং একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের নজরুল নিয়ে বৃহত্তর গবেষণার সুযোগ করে দিন।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্যের শিক্ষার্থী মুজাহিদ বিল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কবি নজরুল আমাদের সাহিত্যে যেমন সাম্য এনেছেন তেমনি এনেছেন বিদ্রোহ। নজরুলের কাজে বাঙালি যেমন প্রেম শিখেছে তেমনি বিদ্রোহ শিখেছে। নজরুল যেকোনও আন্দোলন সংগ্রামে বাঙালিকে সাহস দিয়েছেন তার কবিতা ও গানে। চিরকাল সংগ্রাম করেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ন্যায়ের পক্ষে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুঃখজনক ব্যাপার হলো, আমাদের জাতীয় কবি নজরুল সর্বত্র অবহেলিত হয়ে আসছে। স্বাধীনতার এতো বছর পরও জাতীয় কবির যে প্রাপ্য সম্মান তা আমরা দিতে পারিনি। নজরুল ইনস্টিটিউট কাজী নজরুল ইসলামের স্মরণে যে বিদ্রোহী চত্বর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। আমরা চাই এই উদ্যোগ দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন হোক।’

জানা যায়, বিদ্রোহী চত্বরের নকশা করেছেন অধ্যাপক রফিক আজম। এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছে সিটি করপোরেশন, তত্ত্বাবধান করবে নজরুল ইনস্টিটিউট। ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ১৩/এ এবং ৮/এ রোড সংলগ্ন লেকের পাড়ে এই চত্বর নির্মাণ করা হবে।