অভিবাসন খাতে সাংবাদিকতায় অবদান রাখায় চতুর্থবারের মতো ব্র্যাক মাইগ্রেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন বাংলা ট্রিবিউনের নিজস্ব প্রতিবেদক সাদ্দিফ অভি। তিনি অনলাইন ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া এবছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আরও ১৫ জন সাংবাদিককে এই পদক দেওয়া হয়েছে।
রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত এইচ ই মাইকেল মিলার, ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম ও ব্র্যাকের প্রধান নির্বাহী আসিফ সালেহ।
অভিবাসন খাতে সাংবাদিকদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে ২০১৫ সালে দেশে প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত হয় ব্র্যাক মাইগ্রেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড। এ বছর নবমবারের মতো এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের ২৯ নভেম্বর ‘বিদেশফেরত কর্মীদের সহায়তার প্রকল্পে কত অনিয়ম!’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জন্য সাদ্দিফ অভি এই পুরস্কার অর্জন করেন। অভিবাসন খাতে বিভিন্ন সময় প্রতিবেদনের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এর আগেও তিনবার এই পুরস্কার পেয়েছেন সাদ্দিফ অভি।
সংবাদপত্র (জাতীয়) বিভাগে যৌথভাবে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর প্রতিবেদক কামরুন নাহার ও মাসুম বিল্লাহ। দ্বিতীয় হয়েছেন আজকের পত্রিকার সাইফুল মাসুম এবং দৈনিক ইনকিলাবের হাসানুজ্জামান তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। সংবাদপত্র আঞ্চলিক ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন একুশে পত্রিকার শরীফুল ইসলাম, দ্বিতীয় হন দৈনিক চট্টগ্রাম খবরের ইফতেখায়রুল ইসলাম এবং তৃতীয় হয়েছেন সাপ্তাহিক চৌদ্দগ্রামের মো. শাহীন আলম।
টেলিভিশন নিউজ বিভাগে বাংলাভিশনের কেফায়েতউল্লাহ চৌধুরী শাকিল প্রথম স্থান অধিকার করেন, তার সঙ্গে ক্যামেরায় ছিলেন মোহাম্মদ রাজিবুল ইসলাম। দ্বিতীয় হয়েছেন চ্যানেল ২৪ এর মো. রাশেদুজ্জামান, তার সঙ্গে ক্যামেরায় ছিলেন এস আই সুমন এবং তৃতীয় হয়েছেন আরটিভি’র মো. তানভীর হাসান, ক্যামেরা পারসন ছিলেন মো. জাকির হোসেন রানা। টেলিভিশন প্রোগ্রাম ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের মো. নাজমুল সাঈদ ও ক্যামেরা পারসন কাজী মোহাম্মদ ইসমাঈল। রেডিও বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জাতীয় সম্প্রচার সংস্থা রেডিও তেহরানের মো. বাদশা মিয়া।
অনলাইন সংবাদপত্র ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন জাগো নিউজের মো. জাহাঙ্গীর আলম, দ্বিতীয় হয়েছেন প্রথম আলোর অজয় কুন্ডু এবং যৌথভাবে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন বাংলা ট্রিবিউনের সাদ্দিফ অভি ও খবরের কাগজের শাকিলা আক্তার ববি। বিজয়ীরা পুরস্কার হিসেবে একটি ক্রেস্ট, সনদপত্র এবং পুরস্কারের অর্থমূল্যের চেক পেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো নিয়মিত, নিরাপদ এবং সম্মানজনক অভিবাসনে বিশ্বাসী। আমরা যে ধরনের কাজে কর্মী খুঁজছি সে ধরনের কাজে দক্ষ হলে আরও বেশি সংখ্যায় বাংলাদেশিরা ইউরোপে শ্রম অভিবাসন করতে পারবেন। নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ দুই পক্ষই উপকৃত হবে।’
অভিবাসন খাতে সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মাইকেল মিলার করেন, ‘সাংবাদিকদের কাজ নীতি-নির্ধারকদের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভূমিকা রাখে। গণমাধ্যম বস্তুনিষ্ঠভাবে কাজ করলে বাংলাদেশের অভিবাসন খাত আরও এগিয়ে যাবে।’
অনুষ্ঠানের মূলবক্তা দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, ‘অভিবাসীরা প্রতি বছর দেশে ২২ থেকে ২৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সরকারের উচিত এই খাতে বিনিয়োগে জোর দেওয়া এবং প্রবাসীদের কল্যাণ নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
আয়োজনের সভাপতির ভাষণে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, ‘প্রবাসীদের অভিযোগ কেউ তাদের সমস্যার কথা শোনে না। এ কারণে তারা নিজেদের প্রাপ্য সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত হন।’
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন এবং অভিবাসন কর্মসূচির পরিচালক সাফি রহমান খান, জুরি বোর্ডের সদস্য হিসেবে বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার রাহনুমা সালাম খান। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দূতাবাস এবং দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।