সুন্দরবন কুরিয়ার অফিসে আগুন: ক্ষতিপূরণ পাবেন গ্রাহকরা?

রাজধানীর কল্যাণপুরে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ব্রাঞ্চ অফিসে অগ্নিকাণ্ডে টাকা, স্বর্ণালংকারসহ গ্রাহকদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ক্ষতিপূরণ কতটা মিলবে, কে নেবে এর দায়––এমন প্রশ্নে করছেন সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের গ্রাহকরা। তারা বলছেন, নিরাপদে পণ্য পৌঁছানোর জন্য কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ্বাস করা হয়। অথচ তাদের গাফিলতির কারণে শত শত গ্রাহকের মালামাল পুড়ে ছাই গেছে। এমন অবস্থায় শতভাগ ক্ষতিপূরণের দাবি জানান তারা। 

সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বলছে, গ্রাহকের মালামাল হারিয়ে গেলে, পুড়ে গেলে বা কোনও কারণে নষ্ট হয়ে গেলে প্রতিষ্ঠানের  নীতিমালা অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়ে থাকে। বিশেষ করে কন্ডিশনে টাকা কিংবা কোনও মালামাল পাঠানো এবং শর্তহীন কোনও পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠাটির ক্ষতিপূরণের নীতিমালা রয়েছে। সে অনুযায়ী ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়ে থাকে।

কল্যাণপুরে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ব্রাঞ্চ অফিসে আগুন

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে কল্যাণপুরে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ব্রাঞ্চ অফিসে আগুন লাগে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো অফিসে। পুড়ে ছাই হয়ে যায় মালামাল। পরে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা করে চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ফায়ার সার্ভিসের কল্যাণপুর স্টেশনের সিনিয়র অফিসার আজিজুল হক বলেন, রাত ২টা ৩০ মিনিটে আমাদের কাছে আগুন লাগার সংবাদ আসে। পরে ২টা ৩৫ মিনিটে আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করি। তিনটি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ৩টা ৩০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আর সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ করা হয়।

প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনা হয় আগুন

আগুন লাগার কারণ জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তবে তদন্তের পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিসের কোনও তদন্ত কমিটি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে কোনও তদন্ত কমিটি করা হয়নি। তবে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে তদন্ত কমিটি করা হবে।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে আগুন লাগার পর স্থানীয় ও সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের কয়েকজন স্টাফ জানান, আগুনে গ্রাহকদের পার্সেল ও ডকুমেন্টসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক জিনিসপত্র পুড়ে গেছে। কেমিক্যাল বা কোনও দাহ্য পদার্থ থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে, যে কারণে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো অফিস আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

ফায়ার সার্ভিস এখনও ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে পারেনি

মঙ্গলবার মধ্যরাতে আগুন লাগার পর বুধবার সকাল থেকে কল্যাণপুর সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ব্রাঞ্চের সামনে গ্রাহকদের ভিড় দেখা যায়। তাদের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল ও ডকুমেন্ট পুড়ে যাওয়ায় অনেকে আফসোস প্রকাশ করেন। আরিফ নামে এক গ্রাহক বলেন, গ্রামের বাড়ির জায়গা-জমির কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র যশোরে পাঠানোর জন্য দিয়েছিলাম। এখন এগুলো পুড়ে গেলে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।

আরেক গ্রাহক সিরাজুল ইসলাম বলেন, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ মালামাল পাঠানো হয়। কিন্তু এভাবে গ্রাহকদের মালামাল নষ্ট হয়ে যাওয়ার দায় নেবে কে? এখন আবার বলছে সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। এ দায় গ্রাহকরা নেবেন কেন?

প্রায় সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে

আগুনে গ্রাহকদের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, কতজন গ্রাহকের মালামাল নষ্ট হয়েছে এবং কেন অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে––এ বিষয়ে তদন্ত করতে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে সুন্দরবনের জেনারেল ম্যানেজার (ডিএম, অডিট) মিজানুর রহমানকে। এছাড়াও অন্য দুজন হলেন ডিএম (প্রশাসন) মুনতাকিম দীপু ও আইটি কনসালটেন্ট রিয়াকত শাকিব। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দেবে বলে জানিয়েছে কুরিয়ার কর্তৃপক্ষ

এসব তথ্য জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার (সার্ভিস) তৌফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আগুনে এই ব্রাঞ্চের প্রায় সিংহভাগ মালামাল ও কাগজপত্র পুড়ে গেছে। ফলে এখনই বলা যাচ্ছে না কতজন গ্রাহকের কী কী পণ্য ছিল। তবে কে কী পাঠিয়েছেন, সব কিছুরই ডাটা আমাদের কাছে আছে। তদন্তের মাধ্যমে জানা যাবে। গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ কীভাবে দেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে আমাদের নীতিমালা রয়েছে। গ্রাহকের কোনও মালামাল পাঠানো আগে তাদের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। দুর্ঘটনার শিকার, হারিয়ে যাওয়া কিংবা আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্তের বিষয়ে চুক্তিপত্রে বিস্তারিত দেওয়া আছে। সে অনুযায়ী গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন- কল্যাণপুরে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস অফিসে আগুন