তথ্য চেয়ে পুলিশ সদর দফতরে চিঠি

সাবেক ডিএমপি কমিশনারের তিন হাজার কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদ’

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের যাবতীয় তথ্য চেয়ে পুলিশ সদর দফতরে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে অর্থ পাচারসহ তিন হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রকাশ্য অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত-১ শাখা থেকে একটি চিঠি সোমবার (২৮ অক্টোবর) পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অব.) ও সাবেক ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের তিন হাজার কোটি টাকার দুনীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), যে কারণে তার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রয়োজন।

সাবেক ডিএমপি কমিশনার ও পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি (অব.) খন্দকার গোলাম ফারুকের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগ থেকে জানা যায়, তিনি চাকরিতে থাকা অবস্থায় ক্ষমতার বিশেষ প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ ও আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক। খন্দকার গোলাম ফারুকের স্ত্রীর ভাই ও বোনেরা আমেরিকার নাগরিক। তারা সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। খন্দকার গোলাম ফারুক নিজে ও তার নিকটাত্মীয়দের দিয়ে তার অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা থেকে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকা আমেরিকায় বসবাসরত স্বজনদের কাছে পাচার করেন।

এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে তার প্রায় ৫০০ কোটি টাকার স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ ও নগদ টাকা রয়েছে। কৌশলগত কারণে এসব সম্পদ ও নগদ টাকা নিকটাত্মীয় ও স্বজনদের নামে এবং বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রেখেছেন। টাঙ্গাইলের ভুঞাপুরে খন্দকার হায়দার আলীর বাড়িতে তিনতলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি, ঘাটান্দী খন্দকার হায়দার আলী মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় করেছেন। এই উচ্চ বিদ্যালয়টি কয়েক বিঘা জমি নিয়ে করা হয়।

তার পরিবারের আরেক পুলিশ কর্মকর্তার নামে ঢাকার খিলক্ষেতে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার মূল্যে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। নিজ এলাকায় প্রায় ৩ কোটি টাকার জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেছেন। খন্দকার মিশুর নামে ঘাটান্দী মৌজায় পাকা রাস্তা থেকে গোরস্থান রোডে তিনতলা বিশিষ্ট একটি আধুনিক মডেলের বাড়ি তৈরি করছেন।

খন্দকার গোলাম ফারুক ২০০৯ সালের পর থেকে ময়মনসিংহে পুলিশ সুপার, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন যার বেশিরভাগই আমেরিকায় পাচার করেছেন।

খন্দকার গোলাম ফারুকের স্ত্রী শারমীন আক্তার খানের নামে জমি, বাসা এবং তার একাধিক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান পেয়েছে দুদক। এছাড়াও ময়মনসিংহে স্ত্রী ও তার নিজের নামে জমি রয়েছে বলে দুদকের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন।

দুদকের অনুসন্ধান ও তথ্য চাওয়ার আগাম সংবাদ পেয়ে এবং গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কায় রবিবার (২৭ অক্টোবর) ভোর রাতে তিনি থাইল্যান্ড হয়ে আমেরিকায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালান। কিন্তু ডিএমপির সাবেক এই কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুককে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ। তিনি ইমিগ্রেশনে পৌঁছানোর পর দেখা যায় তার কাছে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নেই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ  সরকারের পতনের পর ডিএমপির সাবেক এই কমিশনারের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। ২০২২ সালের ২৯ অক্টোবর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন খন্দকার গোলাম ফারুক। এরপর ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে যান।