বিদেশে জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন-বায়রার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিয়াজ-উল-ইসলামসহ কমিটির ৯ সদস্যপদত্যাগ করেছেন। এ সময় বর্তমান কমিটিকে ‘ভঙ্গুর কমিটি’ উল্লেখ করে তা বাতিল করে প্রশাসকের মাধ্যমে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
রবিবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রিয়াজ-উল-ইসলাম বলেন, ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনঅব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) কার্যনির্বাহী কমিটির ২০২২-২০২৪ সালের নির্বাচনে মোট ২৭টি পদের মধ্যে আমাদের সম্মিলিত সমন্বয় পরিষদ ২৩টি পদে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলাম। বায়রার সব স্তরের সদস্যদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে শুরু হয়েছিল আমাদের স্বপ্নের অভিযাত্রা।
কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই আমাদের আশা এবং স্বপ্নভঙ্গের শুরু হয় সিন্ডিকেটবিরোধী স্লোগানে নির্বাচিত হওয়া আমাদের প্যানেলের প্রধান (সভাপতি) আবুল বাশার তার একান্ত অনুসারী ১৫ থেকে ১৬ জন সমর্থককে নিয়ে ‘ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য’ পরাজিত প্যানেল প্রধান ও ‘মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটের মূল হোতা’ রহুল আমীন স্বপনসহ ৪ জনের সঙ্গে একীভূত হয়ে আমাদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে সংখ্যালঘুতে রূপান্তর করেন।
সদস্যদের জন্য কিছু না করতে পারাকে ‘অভূতপূর্ব লজ্জাজনক ঘটনা’ উল্লেখ করে রিয়াজ বলেন, প্রবল ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও এই কমিটিতে আমরা যারা সত্যিকার অর্থেই বায়রাকে একটি গতিশীল, সক্ষম সংগঠন হিসেবে দেখতে চাই, তারা বায়রা'র সদস্যদের কল্যাণে এবং এই সেক্টরের উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে কোনও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারিনি।
চলতি বছরের ৭ সেপ্টেম্বর বায়রার বর্তমান কমিটির কার্যকাল শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নিয়ম অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট বা বর্তমান কমিটি ৯০ দিন আগে নির্বাচন কমিশন এবং আপিল বোর্ড গঠনে ব্যর্থ হয়। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দুই দফায় চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্তমান কমিটির মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়।
সেই প্রসঙ্গ টেনে রিয়াজ বলেন, চলতি বছরের ২৪ জুন জরুরি মিটিং করে একটি ‘বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন’ এবং আপিল বোর্ড গঠন করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। যে নির্বাচন কমিশনের প্রধান করা হয় ‘পতিত স্বৈরাচারের’ যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন মহিকে। ওই প্যানেলের সদস্য মাজহারুল ইসলাম মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটের জন্য অভিযুক্ত রুহুল আমীন স্বপনের আপন ভাগ্নে।
এরকম একটি পক্ষপাতদুষ্টও অনভিজ্ঞ কমিশনের মাধ্যমে অনেক সদস্যর প্রবল প্রতিবাদ সত্ত্বেও তিনি এবং তার সহযোগীরা কোনও ধরনের কর্ণপাত না করে একটি প্রহসনের নির্বাচন সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যার মাধ্যমে ‘পতিত স্বৈরাচারী সরকারের দোসররা’ আবারও বায়রায় ক্ষমতায় অধিষ্টিত হয়ে ‘নিজেদের আখের গোছানো’ এবং ‘সিন্ডিকেট-বাণিজ্য’ চালিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
তিনি বলেন, আমরা এফবিসিসিআইয়ের আরবিট্রেশন কমিটির কাছে এই নির্বাচন কমিশন ও আপিল বোর্ড বাতিলের আবেদন করেছিলাম। কিন্তু এফবিসিসিআইয়ের তৎকালীন নেতৃত্ব ‘পতিত স্বৈরাচারী সরকারের দোসর হওয়ায়’ এবং আমাদের প্যানেল প্রধান আবুল বাশার ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাবেক প্রেসিডেন্ট পদের প্রভাব খাটিয়ে এফবিসিআইকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিরত রাখে। পরে আমরা আদালতে গিয়েও এর সুরাহা করতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, সদস্যদের মতামতের প্রতি অসম্মান ও বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার প্রয়াস ছাড়া আর কিছু নয়। এ রকম একটি পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন ও আপিল বোর্ডের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে তারা পুরনো পতিত স্বৈরাচারের দোসর, সিন্ডিকেটের হোতাদেরকে জিতিয়ে এনে বায়রাকে অকার্যকর ও পকেট সংগঠনে পরিণত করার ষড়যন্ত্র আঁটছেন। এরই মধ্যে গত ২৩ অক্টোবর সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট কর্তৃক একটি ইসি কমিটির বৈঠক আহ্বান করা হলে সদস্যদের মধ্যে তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মিটিংটি বাতিল করার নির্দেশ দেই। কিন্তু বর্তমান মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী ‘সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে’ মিটিংটি সম্পন্ন করে পলাতক নির্বাচন কমিশনারের পরিবর্তে তাদের পছন্দ মতো একজনকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়ে পুনরায় নির্বাচন কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
এরই প্রতিবাদে বায়রার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিয়াজ উল ইসলাম, সহ-সভাপতি-১ নোমান চৌধুরী, ‘বৈধ মহাসচিব’ শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান, যুগ্ম মহাসচিব-১ ফখরুল ইসলাম এবং কালচারাল সেক্রেটারি রেহানা পারভীনসহ ৯ জন বায়রার সব পদ এবং ইসি কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন।
সুতারং, বর্তমান বায়রা'র প্রেসিডেন্ট পলাতক, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করেছেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট-১ সহ ৯ জন পদত্যাগ করেছেন এবং বেশ কয়েকজন ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদের’ সদস্যও পলাতক রয়েছেন ফল স্বরূপ বায়রা দৃশত অকার্যকর।
এ অবস্থায় অবশিষ্ট ‘ভঙ্গুর কমিটি’ বাতিল করে প্রশাসকের মাধ্যমে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান তিনি।