ফ্যাসিবাদের শুরু হয়েছিল ১৯৭২ সাল থেকে: নুরুল কবির

২০১৩ সাল থেকে ফ্যাসিবাদের শুরু হয়নি, ১৯৭২ সাল থেকে এটি শুরু হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দ্য নিউ এজের সম্পাদক নুরুল কবির।

শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে ‘জুলাই গণপরিসর’ এর আয়োজনে ‘ফ্যাসিবাদের বয়ান বনাম গণমানুষের গণমাধ্যম’ শীর্ষক সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

নুরুল কবীর বলেন, স্বাধীনতার পর ভিন্নমতাবলম্বী মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছে। সে সময় চারটা ছাড়া সব পত্রিকা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সে সময়ের উপাদান গত ১৫ বছরেও ছিল। কাজেই ২০১৩ সাল থেকে ফ্যাসিবাদের শুরু হয়নি, ১৯৭২ সাল থেকে এটি শুরু হয়েছে। এই ইতিহাসগুলো জানতে হবে। বর্তমানে সাংবাদিকদের ইতিহাসবোধ কম। সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীরা আসাদকে চেনে না, ভাসানী কিংবা মণি সিংহকে চেনে না। এটার দায় শুধু তাদের নয়, তাদেরকে শেখানো হয় না। সাংবাদিকতার কারিকুলামে নির্মোহ ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সভায় প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ফ্যাসিবাদ একা চলতে পারে না বরং  ফ্যাসিবাদ জোট গঠন করে। তিনি বলেন, এটা একচেটিয়া কর্তৃত্ব, যেমন- একচেটিয়া মধ্যবিত্ত তৈরি করে, একচেটিয়া ব্যবসায়িক শ্রেণি তৈরি করে, একচেটিয়া মিডিয়া তৈরি করে। দেশের তিন-চারজন বুদ্ধিজীবী থাকে, জাফর ইকবাল আনিসুজ্জামানের মতো আরও অনেকে আছেন। ফ্যাসিবাদ তার অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করতে অনেকগুলো নির্মাণ প্রতিষ্ঠা করে। প্রথমত সে নিজেকে দেবতা পর্যায়ে নিয়ে যায়, শত্রুকে শূদ্রকরণ করে। একইসঙ্গে তারা নিজেকে ভিক্টিমাইজ করে, যেমনভাবে ইসরায়েল নিজেকে ভিক্টিম হিসেবে উপস্থাপন করে। আওয়ামীলীগও নিজেকে ভিক্টিম হিসেবে দেখে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

ফারুক ওয়াসিফ আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের ভেতরে একটি প্রতিশোধের মনস্তত্ব থাকে যেমন- জার্মানরা মনে করে ইহুদিদের কারণে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তাদের পরাজয় হয়েছে। ফলে তারা প্রতিশোধ নেবে। তারা পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের বিচার করে ফেলেছে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের নামে ২০১৩ সালের বিচার করেছে। তারপরও তাদের প্রতিশোধের মনস্তত্ব যায়নি। প্রতিশোধ নিয়ে ফেলেও তার প্রতিশোধের নেশা যায়নি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিগত সময়ে প্রেস অফিসের কাজ ছিল— একটা সার্ভেলেন্স এজেন্সি বলে দাবি করে বলেন, তাদের কাজ ছিল কীভাবে নিউজ কিল করা যায়, নামানো যায়। নিপীড়নমূলক আইন তো ছিলই। আমি চাই ওপেন প্লাটফর্ম থাকবে, যেখানে সব সাংবাদিক এসে তাদের মনের কথাগুলো বলবে। আমরা কোনও নিউজের জন্য কাউকে ফোন করেছি মনে পড়ে না। আমরা চাই, দেশে গণমাধ্যমের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হোক।

ফ্যাসিজম নানাভাবে আসতে পারে, এটা আসবে না তার তো গ্যারান্টি নাই উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশের সব মিডিয়া আউটলেট থাকুক। তবে যারা ডিহিউম্যানাইজের কাজগুলো করেছে, বাংলাদেশের বিশাল সংখ্যক মানুষের কণ্ঠ কীভাবে রোধ করতে চেয়েছেন, নিজেরাই নিজেদের দিকে তাকান।

সভায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক মাহবুবুল আলম, ডেইলি স্টার বাংলার সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা, প্রথম আলো ইংরেজি বিভাগের প্রধান আয়েশা কবির কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।/এপিএইচ/