রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ডব্লিউএফপিকে নতুন অর্থায়ন যুক্তরাষ্ট্রের

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় তাদের মানবিক প্রতিক্রিয়াকে অব্যাহত রাখার জন্য ইউএসএইডের ব্যুরো ফর হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাসিস্ট্যান্স (বিএইচএ) থেকে নতুন অর্থায়ন পেয়েছে। ১২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের এই সাম্প্রতিক মার্কিন অর্থায়ন বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর  জন্য উভয় ধরনের অর্থ ও পণ্য সহায়তার অন্তর্ভুক্ত। এই তহবিলটি জীবন রক্ষাকারী খাদ্য এবং পুষ্টি সহায়তা প্রদান, ক্যাম্পে স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস করার কাজে ব্যবহৃত হবে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএফপি। স্থানীয় সম্প্রদায়ের শিশু এবং অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী নারীরাও অপুষ্টি প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য সহায়তা পাবেন এই তহবিল থেকে। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়।

সংস্থাটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থায়ন ডব্লিউএফপি-কে হঠাৎ সংকটে যেমন- ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ভূমিধস এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পড়া রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য জরুরি খাদ্য প্রয়োজনীয়তা (গরম খাবার এবং ফর্টিফায়েড বিস্কুট) সরবরাহ করতে সক্ষম করবে।

বাংলাদেশে ইউএসএইড মিশন ডিরেক্টর রিড আঁইশেলমান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ মানবিক অর্থায়নে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রতিশ্রুতি অবিচল রয়েছে। তাদের প্রয়োজন এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অগ্রাধিকার থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

ডব্লিউএফপি বলছে, এখন এই সংকটের অষ্টম বছরে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে, যেখানে চলাচলে বাধা, কাজের সুযোগের অভাব এবং ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা হুমকি রয়েছে। ২০২৩ সালে কম অর্থায়নের কারণে ডব্লিউএফপি খাদ্য বরাদ্দ ১২ মার্কিন ডলার থেকে ১০ ডলার এবং তারপর ৮ ডলারে নামিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছিল। সেই সময়ে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ক্যাম্পে রোহিঙ্গা পরিবারের খাদ্য গ্রহণের হার তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং বৈশ্বিক তীব্র অপুষ্টির হার (জিএএম) ১৫ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছেছে— যা ডব্লিউএইচও’র শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী ১৫ শতাংশ জরুরি সীমার ওপরে এবং ২০১৭ সালের আগমন পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে খারাপ স্তরে পৌঁছেছে।

সংস্থাটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের অবদানগুলো কক্সবাজারে খাদ্য বরাদ্দ পুনরুদ্ধারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০২৪ সালের শুরু থেকে ডব্লিউএফপি রেশন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছিল এবং আগস্ট নাগাদ রেশন পুনরায় সম্পূর্ণ করে প্রতি ব্যক্তির জন্য ১২ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার করা হয়। প্রথমবারের মতো সহায়তা প্যাকেজে সুরক্ষিত চাল যুক্ত করা হয়েছিল। তবে পূর্ণ রেশন বজায় রাখতে এবং আগামী বছর পর্যন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যেতে ডব্লিউএফপি’র জরুরিভাবে প্রায় ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অতিরিক্ত অর্থায়নের প্রয়োজন।

ডব্লিউএফপি’র বাংলাদেশে কান্ট্রি ডিরেক্টর ডম স্ক্যালপেল্লি বলেছেন, আমরা রোহিঙ্গা জনগণের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের এবং অবিচল সহায়তার জন্য গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। আমি আশা করি, অন্যান্য মানবিক এবং উন্নয়ন অংশীদাররাও তাদের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবেন। একসঙ্গে কাজ করলেই আমরা রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারবো, যতক্ষণ না তারা নিরাপদে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন করতে পারে।