বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। মর্ত্যলোক ছেড়ে কৈলাসে ফিরলেন দুর্গতিনাশিনী দুর্গা। চার দিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে চোখের জলে দেবী মাকে বিদায় জানালেন ভক্ত ও পুন্যার্থীরা। তাদের প্রত্যাশা, আসছে বছর আবার আসবেন দেবী, মর্ত্যলোকে বয়ে নিয়ে আসবেন শান্তি আর সমৃদ্ধি।
রবিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর পুরান ঢাকার ওয়াইজ ঘাটে শুরু হওয়া বিসর্জন চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার মন্দির থেকে দেবীর প্রতীমা নিয়ে আসেন কেন্দ্রীয় বিসর্জন ঘাটে। ঢাকঢোল ও কাঁসা বাজিয়ে নৌকায় তোলা হয় দেবীকে। এরপর বুড়িগঙ্গায় দেবী প্রতিমাকে নিরঞ্জন করা হয়।
সনাতন ধর্মের শাস্ত্রমতে, প্রতি শরতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বর্গলোক কৈলাস ছেড়ে মর্ত্যে আসেন দেবী দুর্গা। নির্দিষ্ট তিথি পর্যন্ত বাবার বাড়িতে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ের কৈলাসে স্বামীর বাড়িতে। দেবীর এই আগমন ও প্রস্থানের মধ্যে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব। দোলায় বা পালকিতে আগমনের পর এবার দেবী দুর্গার গমন হচ্ছে ঘোটক বা ঘোড়ায়।
এবার রাজধানীর মোট ১১টি স্থানে প্রতীমা বিসর্জন দেওয়া হয়। এগুলো হলো, সদরঘাট এলাকার ওয়াইজ ঘাট ও লালকুঠি ঘাট, ওয়ারীর পোস্তগোলা শ্মশান ঘাট, আলমগঞ্জ ঘাট, শীতলক্ষ্যা নদীর ঘাট ও বালু নদের ঘাট, উত্তরার আশুলিয়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট, রায়েরবাজার, মিরপুর আমিনবাজার ব্রিজের উত্তর পাশ, মতিঝিলের শ্রীশ্রী বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরের পাশের পুকুর এবং মতিঝিলের মান্ডা আমিন মোহাম্মদ লেক।
তবে সবচেয়ে বেশি প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় ওয়াইজঘাটে। কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন কমিটি সূত্রে জানা যায়, এখানে প্রয় ১০০ প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে এবার। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে দেবী বিসর্জনে ওয়াইজ ঘাটে ছুটে আসেন ভক্তরা। বিসর্জন শেষে সংগ্রহ করেন শান্তিজল।
সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ওয়াইজ ঘাটে পৌঁছে কেন্দ্রীয় বিজয়া শোভাযাত্রা। এরআগে বিকাল ৪টায় বিসর্জনের উদ্দেশ্যে ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গন থেকে কেন্দ্রীয় বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয়। রাজধানীর অধিকাংশ মন্ডপ প্রতিমা নিয়ে পলাশী মোড় থেকে শোভাযাত্রায় যোগ দেয়। সেখান থেকে সম্মিলিত বাদ্যি-বাজনা, মন্ত্রোচ্চারণ ও পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে রাজধানীর বিভুন্ন এলাকা ঘুরে ওয়াইজঘাটে পৌঁছে শোভাযাত্রা।
রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে ওয়াইজ ঘাটে আসা শান্ত বর্মণ বলেন, ‘দেবী মা চলে যাচ্ছেন। এটা যেমন কষ্টের, পাশাপাশি আগামী বছর আবার আসবেন এটাও আনন্দের। দেবীর কাছে দেশবাসীর জন্য শান্তি ও কল্যাণ কামনা করেছি।’
পলাশী থেকে আসা সাগর সিংহ বলেন, ‘বিসর্জনের মধ্য দিয়ে মা কৈলাসে ফিরে যাচ্ছেন। তবে আসছে বছর আবার হবে। মায়ের মর্ত্যলোক ভ্রমণে দেশের সব অস্থিরতা কেটে যাবে, সকল ভেদাভেদ দূর হবে; এটাই প্রত্যাশা।’
এবার রাজধানীতে ২৫২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়েছে। বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জন ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, পলাশী মোড় ও বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় তিনটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়। পলাশীর মোড়, রায় সাহেব বাজার ও ওয়াইজঘাটে স্থাপন করা হয় তিনটি ওয়াচ টাওয়ার।