আনন্দ আর অশ্রুতে বুড়িগঙ্গায় দেবী দুর্গাকে বিসর্জন জানাচ্ছেন রাজধানীর সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সদরঘাটের ওয়াইজ ঘাটে কেন্দ্রীয় বিসর্জন ঘাটে দুর্গতিনাশিনী দেবীতে বিদায় জানাতে জড়ো হন লাখো ভক্ত ও পুণ্যার্থী।
রবিবার (১৩ অক্টোবর) দুপুর থেকেই ওয়াইজ ঘাটে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেবী বিসর্জন পর্ব। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিমা নিয়ে ওয়াইজ ঘাটে আসতে থাকেন ভক্তরা। একে একে পিকআপ থেকে নামানো হয় দেবী দুর্গার প্রতিমা, গণেশ, কার্তিক, লক্ষী, সরস্বতী ও কলা বৌকে।
সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ওয়াইজ ঘাটে পৌঁছে কেন্দ্রীয় বিসর্জন র্যালি। এর আগে বিকাল ৪টায় বিসর্জনের উদ্দেশে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গন থেকে কেন্দ্রীয় বিজয় শোভাযাত্রা বের হয়। তারপর বিভিন্ন পূজামণ্ডপ থেকে ভক্ত-সমর্থকরা এসে জড়ো হন পলাশীর মোড়ে। সেখান থেকে সম্মিলিতভাবে বিজয়ার শোভাযাত্রা বের হয়।
ওয়াইজ ঘাটে নেচে-গেয়ে, ঢাকঢোল ও কাঁসর বাজিয়ে দেবী প্রতিমাকে তোলা হচ্ছে নৌকায়। এরপর বুড়িগঙ্গায় দেবী প্রতিমাকে ঘুরিয়ে করা হচ্ছে নিরঞ্জন। বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা দেখতে ঘাট এলাকায় ভিড় করেছেন হাজার হাজার মানুষ।
প্রতিমা বিসর্জন দেখতে নারিন্দা থেকে আসা শ্যামলি ঘোষ বলেন, ‘প্রতি শরতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে স্বর্গলোক কৈলাস ছেড়ে মর্ত্যে আসেন দেবী দুর্গা। নির্দিষ্ট তিথি পর্যন্ত বাবার বাড়িতে কাটিয়ে আবার ফিরে যান দেবালয়ের কৈলাসে স্বামীর বাড়িতে। দেবী মায়ের এই চলে যাওয়া যেমন আমাদের জন্য কষ্টের, তেমনই আসছে বছর দেবী আবার আসবেন এই অপেক্ষাটাও মধুর।’
এদিকে বিসর্জন ঘিরে ঘাট এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ, নৌপুলিশ ছাড়াও সাদা পোশাকে আছেন গোয়েন্দা সদস্যরা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতয়ালি থানার এসি ফজলুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বরেন, যেকোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুত আছি।
কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য রজত কুমার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দুপুর ১২টা থেকে এখনও পর্যন্ত ৭টি প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। কেন্দ্রীয় পূজা বিসর্জনের র্যালি সাড়ে ৬টায় এখানে পৌঁছেছে। এরপরও রাত ১টা পর্যন্ত বিসর্জন চলবে আশা করছি আমরা।
নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তুষ্টি জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে পুলিশ, নৌপুলিশ, সেনাবাহিনী সদস্যরা নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ড্রোন মোতায়েন করা হয়েছে। নদীতে সব জাহাজ, বাল্কহেড ও ট্রলার চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। নৌ পুলিশ নদী এলাকায় টহল জারি রেখেছে। এছাড়াও পুরো নদী ফ্ল্যাশ লাইট দিয়ে আলোকিত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বিসর্জনের প্রতিটি নৌকায় একজন করে ডুবুরীও রাখা হয়েছে। কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে তার সব প্রস্তুতি রয়েছে। অন্য যেকোনও সময়ের তুলনায় এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশংসনীয়।