আজ বিশ্ব ডিম দিবস, বাজারে ডিম নেই

আজ বিশ্ব ডিম দিবস। ইন্টারন্যাশনাল এগ কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় প্রথম ‘বিশ্ব ডিম দিবস’ আয়োজন করা হয়। পরবর্তী সময়ে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। সে হিসেবে আজ শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো 'ডিমে পুষ্টি ডিমে শক্তি, ডিমে আছে রোগমুক্তি’ স্লোগান সামনে রেখে পালন করছে এবারের দিবসটি। এবার প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল এবং ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন (ওয়াপসা) বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে রাজধানী কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বিশ্ব ডিম দিবস পালনের কর্মসূচি নেওয়া হয়। এর জন্য দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে ডিম দিবসের পোস্টারও।image_6487327

তবে এবারের ডিম দিবস অন্যবারের চেয়ে ব্যতিক্রম। বাজারের খুচরা বিক্রেতার দোকানে আজ মুরগির ডিম নেই। কেবল খুচরা দোকানেই না, ডিম নেই পাইকারি বিক্রেতার দোকানেও। কেউ কেউ দোকান বন্ধও রেখেছেন। শুক্রবার রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরের কাঁচাবাজার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় এই চিত্র।

image_6487327(3)মানব শরীরের প্রয়োজনীয় আমিষের চাহিদা মেটাতে ডিমকে অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে অনেক দিন ধরেই উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে ফার্মের মুরগির ডিম। এতে সীমিত আয়ের মানুষের কাছে দিন দিন অধরাই হয়ে পড়ছে ডিম। ফলশ্রুতিতে ডিমের এই ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানতে সরকার ডিম আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। এতে ডিমের দাম সামান্য কমে আসে। কিন্তু 'সাপ্লাই কম', 'মুরগির খাদ্যের দাম বেশি'- এরকম নানা অজুহাতে এখনও ডিম রয়েছে সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।

আজ মিরপুর-‌১-এ বিভিন্ন দোকানে মুরগির লাল ডিম বিক্রি হয় ডজন ১৫৫-১৬০ টাকায়। সাদা ডিম বিক্রি হয় ১৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ক্রমানুসারে ১৬০-১৬৫ টাকা এবং ১৬০ টাকা । এক্ষেত্রে দেখা যায়, আমদানির সিদ্ধান্তে লাল ডিমের দাম কমেছে ৫ টাকা। অপরদিকে, সাদা ডিমের দামে কোনও পরিবর্তন হয়নি। দাম কমলেও এই সপ্তাহে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের দোকানে নেই ফার্মের মুরগির ডিম। আর যে কয়েকটি দোকানে আছে সেখানেও অল্প পরিমাণে। আবার কয়েকটি দোকান বন্ধই রেখেছে তাদের কেনাবেচা। ডিম না থাকার ব্যাপারে খুচরা বিক্রেতারা বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা ডিম দিতে চান না। তাদের কাছে নাকি ডিম নেই, বাজারে সাপ্লাই কম।

image_6487327(5)খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ শুনে মিরপুর-১ নম্বরের কাঁচাবাজারে পাইকারি ডিমের দোকানে গিয়ে দেখা যায় তাদের কাছেও ডিম নেই। তারা বলছেন, আমরা যাদের কাছ থেকে ডিম আনি তারা দিচ্ছে না। সরকার ডিমের দাম বেঁধে দিয়েছে। সেই দামে নাকি তারা ডিম দিতে পারে না। মুরগির খাদ্যের দাম বেশি তাই।

এদিকে, ডিম না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারে ডিম নাই। মুরগি কী ডিম পাড়া বন্ধ করে দিয়েছে?  তা তো না। তাহলে ডিম নাই কেন?  আমরা তো ভোগান্তিতে পড়ছি।

সোহেল ডিমের আড়তের বিক্রেতা মো. সোহেল বলেন, ডিম আমরা পাই-ই না, বিক্রি করবো কীভাবে? সারা বাজার ঘুরে ডিম পাই না। আজকে আমরা ডিম পাই নাই, বিক্রি করবো কী, আর খাবো কী?  আমি ১৭ বছর ধরে ডিমের ব্যবসা করি, দোকানে ডিম থাকে না—এমন হয় নাই।

আরেক খুচরা বিক্রেতা বলেন, আমরা তো খুচরা বিক্রেতা। আমরা কীভাবে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করবো? ডিমের সিন্ডিকেট করে বড় বড় গ্রুপগুলো। তাদের কারণে ডিমের দাম বেশি।

image_6487327(2)পাইকারি ডিমের দোকান রাজিব পুষ্টি বিতানের বিক্রেতা রানা আহমেদ সাদ্দাম বলেন, আমরা প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার ডিম বিক্রি করি। আজকে মনে হয় অর্ধেকের মতো বিক্রি করেছি। কারণ আমরা ডিম পাইনি। আমরা ডিম আনি টাঙ্গাইল থেকে। তারা বলেছে, তাদের ওখানে ভোক্তা অধিকার নাকি ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু তারা সেই দামে বিক্রি করতে পারবে না। কারণ তাদের নাকি আরও বেশি কেনা পড়ে। তাহলে তারা কীভাবে বিক্রি করবে। তাই আমরা আনতে পারি না।

এদিকে, ডিম ও মুরগি বিক্রেতারা অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন মুরগির খাদ্যের দাম বেশি থাকায় মুরগি ও ডিমের দাম কমছে না। তারা বারবার মুরগির খাদ্যের দাম কমানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, খাদ্যের দাম কমলে ডিম ও মুরগির দাম কমবে।

মিরপুর-১ নম্বর কাঁচাবাজার তদারকিতে আসেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ফুয়ারা খাতুনআজকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মিরপুর-১ নম্বর কাঁচাবাজার মনিটরিংয়ে আসেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ফুয়ারা খাতুন। এসময় ডিম ও মুরগির দাম কমাতে মুরগির খাবারের দাম কমানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বলা হচ্ছে ফিডের দাম বাড়ায় মুরগি বা ডিমের দাম বাড়ছে। ফিডের দাম কমানোর চেষ্টা করা হবে। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ফিডের দাম কামানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।