শ্যামপুর থানায় হামলা ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন স্থানীয়রা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আক্রমণের মুখে পড়ে থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি। সেদিন বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা করে রাজধানীর শ্যামপুর থানাতেও। ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয় থানাটির মূল ভবনে। আগুন থেকে বাঁচতে থানা ভবনের ছাদে আশ্রয় নেওয়া এক পুলিশ সদস্যেরও প্রাণ যায় সেদিন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় মূল থানা ভবন। তবে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে রাজধানীর এই থানাটি। একইসঙ্গে চলছে মেরামত ও সেবা কার্যক্রম।

সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখ পোস্তগোলা ব্রিজের পাশ্বর্বর্তী থানা ভবনটিতে চলছে সংস্কার কাজ। ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন ইতোমধ্যেই মুছে গেছে। মোটামুটি পাঁচতলা ভবনের পুরোটারই সংস্কার কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে রঙের কাজ। ভবনটির নিচতলার একটি কক্ষে প্রাথমিকভাবে ডিউটি অফিসারের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে বসছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।

৫ জুলাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল শ্যামপুর থানা

৫ তারিখের আগে থানায় কর্মরত থাকা একজন পুলিশ সদস্য ও কয়েকজন স্থানীয় জানান, জুলাই-আগস্টে শ্যামপুর এলাকায় আন্দোলনের রেশ তেমন ছিল না। শিক্ষার্থীরা বিক্ষিপ্ত কিছু মিছিল করলেও বড় কোনও জমায়েত এই এলাকায় হয়নি। তবে ৫ আগস্ট থানায় হামলার ঘটনা ঘটে। সেদিন সকাল থেকে থানার সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ সদস্যরা। তাদের লক্ষ্য ছিল থানায় যেকোনও ধরনের ক্ষতি ঠেকানো। তবে মানুষের সমুদ্রে পরিণত হওয়া ঢাকার ঢেউ ছিল শ্যামপুর এলাকায়ও।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্যামপুরের সড়কেও বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। দুপুর নাগাদ একদল লোক পুলিশকে লক্ষ্য করে উসকানিমূলক আচরণ করতে থাকে। পরে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বেলা ৩টা নাগাদ থানা ছেড়ে চলে যান পুলিশ সদস্যরা। এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা থানার মূল ভবনে হামলা চালায়। এ সময় লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়। সবশেষ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় থানা ভবনে।

থানা মেরামতের কাজ এগিয়ে চলেছে

স্থানীয়রা জানান, যারা হামলায় অংশ নিয়েছিল তারা স্থানীয় কেউ নয়। বরং থানায় হামলা ঠেকানোর চেষ্টা করেছিল স্থানীয়রা। তবে ওইদিন কেউ কারও কথা শুনছিল না, এ কারণে থানায় হামলার ঘটনা ঘটে।

থানা এলাকার ব্যবসায়ী সাইদুর বলেন, ‘এই এলাকায় আন্দোলন তেমন হয়নি। তাই পুলিশেরও তেমন খারাপ-ভালো কোনও ভূমিকা ছিল না। ৫ তারিখ তো সারা ঢাকার মানুষ রাস্তায়। যারা থানায় হামলা করেছে আমরা তাদের চিনি না। তারা বাইরের এলাকার। আমরা চেষ্টা করেছিলাম থানায় হামলা ঠেকাতে। কারণ এটা রাষ্ট্রীয় সম্পদ, সরকার পাল্টালেও থানা ঠিক করতে আবার খরচ লাগবে। তাবে তারা আমাদের কোনও কথাই শোনেনি।’

নাশকতার চিহ্ন মুছে নতুন চেহারায় ফিরছে শ্যামপুর থানা

পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আন্দোলনের কয়েকদিন পরই তারা থানায় ফিরে আসেন। থানার তিনটি ভবনের মধ্যে শুধু মূল ভবনটিই ক্ষতিগ্রস্ত। মূল ভবনের পাঁচ তলার মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা পুরো আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যায়। চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় আগুনের কারণে তেমন ক্ষতি না হলেও ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। আগুনে পুড়ে যায় থানার একটি গাড়ি ও বেশ কয়েকটি আলামতের গাড়ি। ২৩টি মামলার আলামত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেদিন।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে থানার কার্যক্রম স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। নিয়মিত টহল অব্যাহত আছে। থানায় ৫ আগস্টের আগে ১৫০ জন জনবল থাকলেও বর্তমানে কিছু ঘাটতি আছে। বদলি প্রক্রিয়া চলমান থাকায়ও জনবল কম-বেশি হচ্ছে। বর্তমানে ২৩ জন এসআই, ১৯ জন এএসআই, ৩৫ জন পুরুষ ও ২১ জন নারী কনস্টেবল এখানে কর্মরত রয়েছেন।’

শ্যামপুর থানা

তিনি আরও বলেন, ‘থানার কার্যক্রম যতটা সচল রাখা সম্ভব আমরা চেষ্টা করছি। মানুষ সেবা নিতে নিয়মিত থানায় আসছেন। মামলা ও সাধারণ ডায়েরি করছেন। যতদিন যাচ্ছে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বাড়ছে। এখন তিনটি গাড়ি দিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পাচ্ছি। মানুষই চাচ্ছে পুলিশ সক্রিয় হোক। পুলিশ সদস্যদের ভেতরে শুরুতে একটা ট্রমা ছিল, সবাই সেটা মোটামুটি কাটিয়ে উঠেছে। থানার মেরামত কাজ সপ্তাহ খানেকের মধ্যে শেষ হবে। তখন আমরা আরও ভালোভাবে কাজ করতে পারবো।’

ছবি: প্রতিবেদক