দুই কোটি যাত্রীর হাব হতে যাচ্ছে শাহজালাল

বর্তমানে বছরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করছেন প্রায় এক কোটি যাত্রী। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রী সংখ্যা অন্য যেকোনও সময়ের তুলনায় এখন বেশি। প্রতিদিন ৩০-৩৫ হাজার যাত্রী দেশের সবচেয়ে বড় এ বিমানবন্দর ব্যবহার করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাচ্ছেন। সেই হিসাবে গত এক বছরে প্রায় ১ কোটি যাত্রী এ বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন। আগামী বছরের শুরুর দিকে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হতে যাচ্ছে শাহজালালের থার্ড টার্মিনাল। আর এই টার্মিনাল চালু হলে যাত্রীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। অর্থাৎ বছরে প্রায় দুই কোটি যাত্রী এই বিমানবন্দর ব্যবহার করবেন।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি থার্ড টার্মিনাল পরিদর্শন করেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (বেবিচক) মঞ্জুর কবীর ভূইয়া। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণকাজ ৯৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বৈশ্বিক যোগাযোগের গেটওয়ে হিসেবে এই টার্মিনালের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এজন্য অবশিষ্ট কাজগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা প্রয়োজন।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রেকর্ড সংখ্যক যাত্রী দেশের সবচেয়ে বড় এই বিমানবন্দর ব্যবহার করছেন। আমাদের সেবার পরিধিও বাড়ছে। থার্ড টার্মিনাল হস্তান্তরের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। এটি চালু হলে বিশ্বের বড় বড় বিমানবন্দরের রূপ লাভ করবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।’

তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে বছরে প্রায় কোটির মতো যাত্রী এ বিমানবন্দর ব্যবহার করছে। এর অর্থ হলো, বিমানবন্দরের প্রতি মানুষের আস্থা দিন দিন বাড়ছে। দেশের বাইরে যেসব প্রবাসী, আমরা যাদের ‘রেমিট্যান্স যোদ্ধা’ বলি, তাদের ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ নজর নিচ্ছি। তারা যেন কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হন, সেই বিষয়টা লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।’’

কামরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সামনের দুই-এক বছরের মধ্যে পুরো শাহজালালের চিত্র পাল্টে যাবে। এভিয়েশনের হাবে পরিণত হবে এই বিমানবন্দর। এখন যেমন কোটির ঘরে যাত্রী রয়েছে, আগামীতে বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের দুই কোটিরও বেশি যাত্রীর পদচারণা থাকবে এই বিমানবন্দরকে ঘিরে।’

শাহজালালে যাত্রীদের ভিড়

শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্র জানায়, কোভিডের সময়ে বিশ্বের অন্যান্য বিমানবন্দরের মতো শাহজালালেরও যাত্রী সংখ্যা কমে গিয়েছিল। তবে এরপর থেকে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ১৬০/১৭০টি উড়োজাহাজ যাত্রী নিয়ে আসা-যাওয়া করে। আর কার্গো মিলিয়ে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০টি উড়োজাহাজ শাহজালাল বিমানবন্দর ব্যবহার করছে।

বিমানবন্দর সূত্র বলছে, ২০২০ সালে করোনার সময়ে ৩০ লাখের কিছু বেশি যাত্রী এ বিমানবন্দর ব্যবহার করেছে। ২০২১ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ৩৮ লাখে পৌঁছায়। এরপর থেকে অতিমারি করোনা নিয়ন্ত্রণে আসলে যাত্রীর সংখ্যা ব্যাপকহারে বেড়ে যায়। ২০২২ সালে শাহজালাল বিমানবন্দর ব্যবহার করে ৭০ লাখের কিছু বেশি যাত্রী। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ৯০ লাখের ঘরে চলে যায়। চলতি বছরের শুরু থেকে যে পরিমাণ যাত্রী যাতায়াত করছে, তাতে বছর শেষে এ সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে যাবে।

এভিয়েশন বিশ্লেষক ড. কুদরাত ই খুদা বাবু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে এই বিমানবন্দর একটি হাবে পরিণত হবে। সেক্ষেত্রে যাত্রীর সংখ্যা আরও বাড়বে। সব অবকাঠামো ও উন্নয়ন কাজ শেষ হলে একদিকে যেমন এ এলাকাটি বিশ্বের অন্যান্য বিমানবন্দরের চেয়ে দৃষ্টিনন্দন হবে, তেমনই দেশি-বিদেশি যাত্রীর পদচারণায় ভিন্নরূপে শাহজালালের আবির্ভাব ঘটবে। তখন যেমন সরকারের রাজস্ব বাড়বে, তেমনই এর গুরুত্বও অনেক বেড়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন যাত্রীদের মাঝে মাঝে যে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে সেটি থাকবে না। তাতে করে যাত্রীদের আস্থা আরও বাড়বে।’

বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, যাত্রীর নিরাপত্তাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিতে এভিয়েশন সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা সদস্যরাও কাজ করে যাচ্ছেন। যাত্রীরা যেন হয়রানি, চুরি বা লাগেজ কাটার মতো ঘটনার শিকার না হন, আমরা সেটি নিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর।

তারা বলেন, যাত্রীর সন্তুষ্টি আমাদের সন্তুষ্টি। আমাদের কারণে যেন তারা শাহজালালকে নিরাপদ মনে করে এটিকে ব্যবহার করতে পারেন, সেই চেষ্টাই আমাদের রয়েছে।