হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমসের তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। নেপালফেরত এক যাত্রীর লাগেজ নিয়ে টানা-হেঁচড়া ও জোর করে চকলেট খাওয়া, কসমেটিকস রেখে দেওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে কর্তৃপক্ষ তাদের সাময়িক বরখাস্ত করে। বরখাস্তকৃত কর্মকর্তারা হলেন— আজিজুল হক, শিমুল চৌধুরী ও মো. আল আমিন। তারা সবাই সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা।
ঢাকা কাস্টমস হাউসের চোরাচালান প্রতিরোধ টিমের উপ-কমিশনার ইফতেখার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, কিছু অনিয়মের বিষয় প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) নেপালফেরত এক যাত্রী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামলে ওই কর্মকর্তারা কাস্টম বেল্টে তার লাগেজ চেক করেন। লাগেজে কোনও ধরনের অবৈধ মালামাল না থাকা সত্ত্বেও তাকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে যাত্রীর লাগেজে থাকা চকলেট তার সামনেই নানা অঙ্গভঙ্গী করে খেতে থাকেন অভিযুক্ত কর্মকর্তারা। এমনকি তার লাগেজে থাকা সাবান-শ্যাম্পুসহ কিছু কসমেটিকস রেখেও দেন তারা ।
নেপালফেরত ওই যাত্রীকে নাজেহাল করার বিষয়টি দেখতে পান আনোয়ার ফারুক নামে এক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা । তিনি তার মোবাইল ফোনে সেই দৃশ্য ভিডিও করেন। পরে ভিডিওটি নিজের ফেসবুক আইডি থেকে আপলোড করেন।
একইসঙ্গে আনোয়ার ফারুক তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেন ‘ভেবেছিলাম স্বৈরাচার পতনের পর নতুন করে স্বাধীন দেশে মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আসবে, বিশেষ করে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে। কিন্তু না, আমরা পরিবর্তন হইনি। আজ (শনিবার) বিকালে নেপাল থেকে আসার পর লাগেজের জন্য অপক্ষা করছিলাম। হঠাৎ নজরে এলো— বিদেশ ফেরত নিরীহ একজনের সঙ্গে কাস্টমসের কর্মকর্তারা কী করছে। তার ব্যাগ খুলে চেকিংয়ের নামে অযথা হয়রানি। একজন তো ব্যাগ থেকে কয়টা চকলেটের বার নিয়ে গেলো। আরেকজন একটা বার (চকলেটের প্যাকেট) খুলে নিজেও খাচ্ছে, অন্যদেরও দিচ্ছে। দালালরা এসে নানান প্রস্তাব দিচ্ছে। আমার দেখায় তার তো অবৈধ কোনও কিছু ছিল না। হয়তো অনেক দিন পর এসেছে— বাড়ির জন্য সাবান, শ্যাম্পু , চকলেট, বাচ্চার জন্য দুধ আর কাপড়চোপড় দেখলাম। মনে মনে ভাবলাম লোকটা এত কষ্ট করে কাজ করে বাচ্চার জন্য চকলেট আনলো, আর আপনি (কাস্টমস কর্মকর্তা) আপনার বাচ্চার জন্য নিয়ে নিলেন, হজম হবে তো! এত শহীদ এত ত্যাগ, কিছুই কি পরিবর্তন হবে না। আর কবে মানুষ হবো আমরা।’
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা কাস্টমস হাউসের দৃষ্টিগোচর হয়। পরে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত করার আদেশ জারি করা হয়।
উপ-কমিশনার ইফতেখার হোসেন জানান, হয়রানির শিকার ওই যাত্রী নেপাল থেকে দেশে আসেন।