‘বিদ্যমান আইন দিয়ে স্বচ্ছ-নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব নয়’

বিদ্যমান আইন দিয়ে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা, রাজনৈতিক দলের নেতারা ও বিশিষ্টজনরা। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) গুলশানে এক হোটেলে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত 'বাংলাদেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ' বিষয়ে এক সংলাপ অনুষ্ঠানে তারা এ মত দেন।

সংলাপে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের নিয়োগপ্রক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। প্রয়োজনে তিন স্তরের একটা সার্চ কমিটি থাকতে পারে। তবে যত ভালো কমিশন গঠন হোক না কেন, দেশে যতগুলো ভালো নির্বাচন হয়েছে, অন্তবর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হয়েছে। তাই একটি নিরেপক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে সৎ হতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিটির প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘দায়মুক্তির বিধান যুক্ত করে ২০২২ সালের প্রণিত আইনে যাকে খুশি তাকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব। এর আগের নির্বাচন কমিশন পোস্ট অফিসের ভূমিকা পালন করেছে, তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছে।’

নতুন করে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ইসি গঠনে বাছাই কমিটি করতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে আগামীর নির্বাচন কমিশন দেখতে চাই।’

বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহকারী সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেন, ‘সার্চ কমিটির মাধ্যমে পাওয়া নাম নিয়ে আবার রাজনৈতিক দলের কাছে ফিরে যেতে হবে, কারণ রাজনৈতিক দলগুলো এর সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার।’

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘সবার আগে প্রয়োজন বিদ্যমান আইনটি বাতিল করা। এমনভাবে কমিশন গঠনপ্রক্রিয়া প্রণয়ন করতে হবে, যাতে কোনও সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, ‘অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা নয়, বাংলাদেশের বাস্তবতার আলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘স্থায়ী সমাধান এখন চিন্তা না করে কী করে পরবর্তী নির্বাচন ভালো করা যায়, সেই পদক্ষেপ নিয়ে এখন ভাবতে হবে।’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বিচার বিভাগকে কোনও অবস্থাতেই নির্বাচন কমিশন গঠনে যুক্ত করা ‍উচিত হবে না মনে করেন। তিনি সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও ছাত্র প্রতিনিধির সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন্দ বিগত কমিশনকে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার দায়ে আইনের আওতায় আনার কথা বলেন।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূর সাত শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি নিয়ে সাত সদস্যের সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। এ ছাড়া তিনি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ এবং আনুপাতিক নির্বাচনি ব্যবস্থার প্রস্তাব করেন।

সংলাপে জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে অংশ নেন আরিফুল ইসলাম আদিব মো. মিরাজ মিয়া ও নাহিদা সারওয়ার চৌধুরী সামান্তা। তারা বলেন, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য না থাকলে শুধু নির্বাচন কমিশন দিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়। কমিশনকে ডি ফ্যাক্টো অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পাওয়ার দেওয়া হলে নির্বাচন পরিচালনা সহজ হবে। ছোট-বড় সব দলের মতামতকে সমান গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন তারা।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. রওনক জাহান। সংলাপে স্বাগত বক্তব্য দেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি ডানা এল ওল্ডস।

এ ছাড়া ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের মুখ্য পরিচালক ড. আব্দুল আলিম উপস্থাপিত পলিসি ব্রিফে (নীতি প্রস্তাবনা) বলেন, যেকোনও নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্বাচন কমিশন নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকেই শুরু হয়। স্বাধীন কমিশন গঠনে তিনি সুনির্দিষ্ট পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেন।