শুক্রবার সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হতে শুরু করে। যেখানে দেখা যায়, সমুদ্রসৈকতে এক নারীকে কান ধরে উঠবস করানো হচ্ছে। তাকে ঘিরে রেখেছে জনা বিশেক যুবক। বেশির ভাগের হাতে ভিডিও ধারণরত মোবাইল। ওই নারীকে হাতের লাঠি দিয়ে প্রহার করে তাকে বিচ থেকে চলে যেতে বলা হচ্ছে।
ঘটনার পর ফ্যাক্ট চেকাররা এই ভিডিওদাতার পরিচয় খুঁজে পেয়েছেন। তার নাম ফখরুল ইসলাম, আর ঘটনা কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের।
ভিডিও আপলোডকারীর ফেসবুকে গিয়ে দেখা যায়, এ ধরনের আরও কয়েকটি ভিডিও সেদিন বিচে করা হয়েছে। কান ধরে উঠবস করা ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওর আরেকটি পার্ট অনলাইনে পাওয়া যায়। যেখানে দেখা যায়, প্রায় কুড়ি-ত্রিশ জন ঘিরে রেখে তাকে নানা প্রশ্ন করছেন, মুখে পরা মাস্ক খুলতে বলছেন, গালি দিচ্ছেন। এ সময় একজন নারীও এসে ভিডিও করতে শুরু করেন। একফাঁকে সেই নারী এগিয়ে এসে ভুক্তভোগীর নারীর মুখ থেকে জোর করে মাস্ক খুলে ফেলে ভিডিও ধারণ করতে থাকেন।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, একজন নারী বিচে বসে আছেন। কয়েকজন সেখানে হাজির হয়ে জানতে চান— ‘এখানে কী করেন, মহিলা মানুষ রাত ১২টায় এখানে কেন?’ বলতে বলতে মারার ভঙ্গি করলে পেছন থেকে আরেকজন বলে ওঠে— ‘ক্যালানি দিতে দিতে আসতেসি, বুঝতে পারসেন? ক্যালানি খাবেন? ছলে যান ছলে যান।’ আরেকজন বলে উঠছেন, ‘পুরা বিচের পরিবেশ এরা (এই নারীরা) নষ্ট করে ফেললো।’
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপির বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেকবিষয়ক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির ভিডিওগুলোর বিষয়ে বলেন, ‘ফেসবুকে ঘেঁটে লাঠিওয়ালা যুবকটির পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম। তার ফেসবুক প্রোফাইলেও পুলিশের কাছে মোবাইল ফেরত চাওয়া নারীটির ছবি ১২ সেপ্টেম্বর পোস্ট করে ওই নারীর সঙ্গে করা আচরণের পক্ষে সাফাই দিয়েছেন। ফারুকুলের বিভিন্ন পোস্ট বিশ্লেষণ করে বোঝা যাচ্ছে, তিনি এবং তার সঙ্গে থাকা অনেকে ১১ সেপ্টেম্বর রাতে তিনটি ভিডিওতে দেখা যাওয়া ঘটনাগুলো ঘটিয়েছেন।’
এদিকে ১২ সেপ্টেম্বর সকালে তার একটি পোস্টে ফারুকুল লিখেছেন, ‘পুলিশ ভাইদের প্রতি দোয়া রইলো, গত রাতে আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছেন। সুন্দরভাবে বাসায় পৌঁছে দিয়েছেন, ধন্যবাদ আপনাদের প্রতি।’
সেই পোস্টের কমেন্টে তিনি আরও লিখেছেন, ‘পুলিশ ভাইদের প্রতি আমার আহ্বান জানাচ্ছি— আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এই কাজটা করলাম। সুতরাং আপনারা আপনাদের জায়গা থেকে এদের প্রতি রুখে দাঁড়ান। ইনশাআল্লাহ, আপনারা চাইলেই সবকিছু সম্ভব।’
এ বিষয়ে দায়িত্বে থাকা ট্যুরিস্ট পুলিশ অবহিত আছে কিনা, জানতে চাইলে কক্সবাজার রিজিয়নের এএসপি আবুল কালাম বলেন, ‘আমার জানা ছিল। আজই আরেকজন আমাকে ভিডিওটা পাঠালে আমি জানতে পারি। পরবর্তী সময়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, সেদিন এ ধরনের কিছু ঘটনা ঘটেছে। সে সময় সেখানে পুলিশের কেউ ছিল না। ঘটনার খবর শুনে পুলিশ সেখানে গেছে।’
ওখানে থার্ড জেন্ডার কয়েকজন থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মাঝেমধ্যে আমরাও তাদের চলে যেতে বলি, সরে যেতে বলি। ট্যুরিস্টরা বিরক্ত হয়।’
চাইলেই থার্ড জেন্ডার কাউকে ধরে জোর করে কান ধরে উঠবস করানো, মুখ থেকে মাস্ক খুলে ভিডিও করা যায় কি না, প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘না, তা যায় না।’