সবাই আমাদের প্রতিপক্ষ মনে করে: মানববন্ধনে সাংবাদিকদের অভিযোগ

কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংস ঘটনায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় চার সাংবাদিক হত্যা এবং আড়াই শ সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন সাংবাদিকরা। এ সময় সব পক্ষকেই সাংবাদিকদের প্রতি সহনশীল ও সহযোগিতামূলক আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

শুক্রবার (২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ‘আমরা গণমাধ্যমকর্মী’ ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি করেন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা। এ সময় সাংবাদিকদের হত্যা, আক্রমণ ও হয়রানির প্রতিবাদ জানান তারা।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ‘সাংবাদিক কারও প্রতিপক্ষ নয়। আন্দোলনে শিক্ষার্থীসহ সব পেশার দুই শতাধিকের অধিক মানুষের নিহত ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনায় চার জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২৫০ জন সাংবাদিক। এখনও অনেক সাংবাদিক চিকিৎসাধীন, অথচ তাদের পাশে কেউ নেই।’

নিহত সাংবাদিকরা হলেন—ঢাকায় ঢাকা টাইমসের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাসান মেহেদী (৩১), ফ্রিল্যান্স ফটো জার্নালিস্ট তাহির জামান প্রিয়, গাজীপুরে দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকার মো. শাকিল হোসেন এবং সিলেটে দৈনিক নয়াদিগন্তের সিলেট প্রতিনিধি এ টি এম তুরাব।

‘আমরা গণমাধ্যমকর্মী’ ব্যানারে মানববন্ধনে ৭১ টিভির জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন বলেন, ‘আমরা মাঠের রিপোর্টার। আমরা সত্য ঘটনা প্রকাশ করতে কাজ করি। আমরা কারও প্রতিপক্ষ নই। আমি এখনও শরীরে গুলি (ছররা গুলি) নিয়ে সাংবাদিকতা করছি। পেশাগত দায়িত্ব পালনে কোনও পিছপা হবো না।’

আরেক বক্তা জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শাহনাজ শারমিন বলেন, ‘হামলা-মামলা, হত্যা ও নিপীড়ন করে সাংবাদিকতা বন্ধ করা যাবে না। সেখানে সরকার প্রতিপক্ষ মনে করে আবার আন্দোলনকারীও প্রতিপক্ষ মনে করে। ফলে সবাই সাংবাদিকদের দমন করতে চায়। সাংবাদিকতা একটি থ্যাংকসলেস পেশা। এটা জেনেও আমরা সাংবাদিকতা করি।’

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া আহত অনেক সাংবাদিক তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। জ্যেষ্ঠ ফটোসাংবাদিক শামিম আহমেদ বলেন, ‘মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় আমার ওপর একাধিকবার হামলা হয়েছে। আমার ওপর কোনও ছাত্র হামলা করেনি। বরং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের লোকজন আমাকে ঘিরে ধরে মারধর করেছে।’

যমুনা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার রাব্বি সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা সাধারণ সাংবাদিকরা কোথায় যাবো? আমাদের নিরাপত্তা দেবে কে? আমরা আমাদের চার জন ভাইকে হারালাম। বহু ভাইবোন আহত, রাষ্ট্র কি তাদের খোঁজ নিয়েছে? খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছি, তা বোঝানোর মতো নয়। আমরা প্রত্যেক গণমাধ্যমকর্মী ট্রমার মধ্যে আছি। আমরা প্রতিটি মুহূর্তে আতঙ্কে থাকি। এটা কবে কাটবে?’

মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতাদের সমালোচনা করে আরেক সিনিয়র সাংবাদিক মাহবুব বলেন, ‘আমাদের যেসব সাংবাদিক নেতা আছেন, তারা শুধু টেলিভিশিনের টক শো-তে এসে সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের যে গালগল্প করেন, সেটি তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য। বাস্তবে তারা কিছুই করেন না। বরং তারা মাঠের সাংবাদিকদের মাথা বিক্রি করে চলেন। বাস্তবে তারা সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে কিছুই করেন না।’

বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র‍্যাব) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিপন দেওয়ান বলেন, ‘সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনে জড়িতদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চিহ্নিত করে তাদের বিচার করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেবেন সংবাদমাধ্যমকর্মীরা।’