ডিবিতে ৩২ ঘণ্টা অনশনে ছিলেন ৬ সমন্বয়ক!

কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তারা ৫ দিন ধরে ডিবি কার্যালয়ে আটক ছিলেন। সেখানে ছয় সমন্বয়ক ৩২ ঘণ্টা ধরে অনশনের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে দাবি করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদের বাবা বদরুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুর দেড়টার পর স্বজনদের কাছে ছয় সমন্বয়ককে ছেড়ে দেওয়া হয়। ডিবি’র সদস্যরা নিজেদের গাড়িতে করে তাদের বাসায় পৌঁছে দেন।

ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়া ৬ সমন্বয়ক হলেন—নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের, নুসরাত তাবাসসুম, সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। নাহিদের বাবা বদরুল ইসলাম বলেন, ‘নাহিদসহ ছয় সমন্বয়কারী ডিবি কার্যালয়ে ৩২ ঘণ্টা অনশনে ছিল। পরে সেখানে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। বর্তমানে তারা বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছে।’

বদরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৬টায় সবার পরিবারকে ফোন দিয়ে ডিবি কার্যালয়ে আসতে বলা হয়। দুপুর দেড়টার দিকে ডিবি তাদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় বাসায় দিয়ে আসে।’

এর আগে গত শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকালে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নাহিদ ইসলামসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়। সেদিন ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান (সদ্য বদলি হওয়া) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ জানান, নিরাপত্তাজনিত কারণে তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়েই আনা হয়েছে।

নাহিদ ছাড়া অপর দুই সমন্বয়ক হলেন—আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার। তারা তিন জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পরদিন শনিবার (২৭ জুলাই) সন্ধ্যায় সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকেও ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এরপর রবিবার (২৮ জুলাই) ভোরে মিরপুরের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে নিয়ে আসা হয় নুসরাত তাবাসসুমকে। এরপর থেকে তারা মিন্টো রোডে ডিবির কার্যালয়ে ছিলেন।

সেখানে থাকা অবস্থায় এক ভিডিও বার্তায় আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন এই ছয় জন। তবে তাদের দিয়ে জোর করে এই ঘোষণা দেওয়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন অন্য সমন্বয়করা। পরে তাদের সঙ্গে এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে দুই দফায় খাবার খাওয়ার ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে আবারও আলোচনায় আসে ডিএমপির ডিবি উইং। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন উচ্চ আদালতও। তাদের ছেড়ে দেওয়া সংক্রান্ত একটি রিটের শুনানিতে হাইকোর্ট মন্তব্য করেন, ‘ডিবি অফিসে যাকে তাকে ধরে নিয়ে যাবেন, তারপর খাবার টেবিলে বসাবেন। এভাবে জাতির সঙ্গে মশকরা করবেন না’।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলেন ১৪ দলীয় জোটের নেতারাও। বিষয়টি তুলে ধরে তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর বলেন, এটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ডিবিতে যে সমন্বয়কদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে এটি ঠিক হয়নি।

১৪ দল থেকে ডিবির এ ধরনের কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে ডিবি প্রধানের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সমালোচনা করা হয়। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিবির এ ধরনের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে রাতেই কথা বলবেন।

এমন আলোচনার পর বুধবার (৩১ জুলাই) ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় হারুন অর রশিদকে। তাকে বদলি করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।