প্রথমে ভিজিট ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে জিম্মি, তারপর চলে নির্যাতন

মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই, লিবিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্র। পরে সেখানে জিম্মি ব্যক্তিদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। তাদের নির্যাতনের দৃশ্য ধারণ করে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে চাওয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। আবার কখনও ভিডিও কলেও পরিবারকে দেখানো হতো নির্যাতনের ভয়ংকর চিত্র।

এসব অভিযোগে মানবপাচার ও মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের মূলহোতা বাদশা মিয়া (৪২) ও তার সহযোগী আরজু বেগমকে (৩১) কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

শুক্রবার (২৮ জুন) গণমাধ্যমকে এসব বিষয়ে নিশ্চিত করেন সিআইডির পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান।

তিনি বলেন, মানবপাচারকারী চক্রটি বিদেশগামী অসহায় লোকদের উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে প্রথমে ভিজিট ভিসায় দুবাই নিয়ে যায়। তারপর লিবিয়ায় থাকা আরজু বেগমের স্বামী রেজাউল করিমের নেতৃত্বে তাদের জিম্মি করা হয়। পরে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপর একটি চক্রের কাছে হস্তান্তর করতো। এই চক্রটি ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে ইমোতে কল দিয়ে নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে মুক্তিপণ দাবি করতো। মুক্তিপণ আদায়ের পর তাদের ঝুঁকিপূর্ণভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের উদ্দেশে পাঠিয়ে দিতো। এতে ভূমধ্যসাগরে অনেকেই মারা যায়।

তিনি আরও বলেন, গত বছর মাগুরার মো. নাছির হোসেন নামে এক ভুক্তভোগীর করা মামলার তদন্তে নেমে এই চক্রের দুজনকে গ্রেফতার করে সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম টিএইচবি শাখার একটি দল। মামলায় ওই ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, তার চাচা ওমর আলীর মাধ্যমে তিনি ভারত ও দুবাই হয়ে লিবিয়া যান। সেখানে লিবিয়াপ্রবাসী মাহবুবুর রহমান ছদরুলের তত্ত্বাবধানে তিনি টাইলসের কাজ করতেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে নাছিরকে লিবিয়ার অজ্ঞাত স্থানে মানবপাচারকারী চক্র আটক করে। তারপর তার পরিবারের কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে। এরপর তার পরিবারকে বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে বাধ্য করে।

আজাদ রহমান বলেন, বাদশা মিয়া তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে একটি চলতি হিসাব খুলে আরজু বেগমকে ব্যবহার করতে দেন। ওই হিসাবে ১২ লাখ ৫০ হাজার ৯১০ টাকা জমা হয় এবং ১০ লাখ ৯৭ লাখ ২৮৫ টাকা তোলা হয়।

বাদশা মিয়া ও আরজু সম্পর্ক চাচাতো ভাই-বোন। তারা কক্সবাজারের পেকুয়ার বাসিন্দা। দুজনই আদালতে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানান সিআইডির পুলিশ সুপার।