কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ঢাকার দুই সিটির কে এগিয়ে?

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ছয় ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে, ২৪ ঘণ্টার আগেই কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

এরমধ্যে পূর্বঘোষিত ছয় ঘণ্টায় শতভাগ কোরবানির বর্জ্য অপসারণের দাবি করেছে ডিএনসিসি। ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন জানান, ছয় ঘণ্টার মধ্যে ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডে শতভাগ কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।

এরআগে, বিকাল পাঁচটার দিকে ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা জানান, তিন ঘণ্টায় ডিএনসিসির ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৬টি ওয়ার্ডের বর্জ্য অপসারণ করতে পেরেছে। যা ২৯ শতাংশের কিছুটা বেশি। অর্থাৎ বাকি তিন ঘণ্টায় ডিএনসিসি ৭১ শতাংশ বর্জ্য অপসারণের দাবি জানান।

অন্যদিকে, ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তার মো. আবু নাছের জানান, ডিএসসিসির ৭৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে রাত আটটা নাগাদ পর্যন্ত ৬৪টি ওয়ার্ড থেকে কোরবানির পশুর শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। শতভাগ বর্জ্য অপসারণ হওয়া ওয়ার্ডগুলো হলো- ১, ২, ৪, ৫, ৭, ৯, ১০, ১২, ১৩, ১৬, ১৭, ১৯ থেকে ৪১, ৪৩ থেকে ৫৯, ৬১, ৬৩ থেকে ৬৬, ৬৮ থেকে ৭৫ নম্বর ওয়ার্ড। রাতের মধ্যেই বাকি ওয়ার্ডগুলোর বর্জ্য অপসারণের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

পূর্ব-ঘোষিত ছয় ঘণ্টায় শতভাগ কোরবানির বর্জ্য অপসারণের বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, 'সবার সহযোগিতায় পূর্ব-ঘোষিত ছয় ঘণ্টায় ঢাকা উত্তর সিটির কোরবানির বর্জ্য শতভাগ অপসারণ করা সম্ভব হয়েছে। সচেতন নাগরিকদের আন্তরিক সহযোগিতায় এটি করতে পেরেছি। আমি নগরবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আগামী দিনেও ঢাকা শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে জনগণ ও সিটি করপোরেশনকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।'

এদিকে, যারা আজ ঈদের দিন কোরবানি দিতে পারেন নাই তাদেরকে আগামীকাল সকালের মধ্যেই কোরবানি সম্পন্ন করার আহ্বান জানান ডিএনসিসি মেয়র। তিনি বলেন, 'অনেকে সন্ধ্যার পর এমনকি রাতেও কোরবানি দিচ্ছেন তারা আমাদের হটলাইন ১৬১০৬-এ ফোন করে জানাবেন। আমাদের কর্মীরা বর্জ্য সংগ্রহ করে নিয়ে আসবে।'

ডিএনসিসির বর্জ্য বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫৪টি ওয়ার্ডের সব এলাকার শতভাগ বর্জ্য অপসারণ সম্পন্ন হয়েছে। দুপুর ২টা থেকে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু করে রাত ৮টায় নির্ধারিত ৬ ঘণ্টায় সবগুলো ওয়ার্ডের শতভাগ বর্জ্য ডিএনসিসি অপসারণ সম্পন্ন করে। ডিএনসিসির সবগুলো ওয়ার্ড থেকে ঈদের দিন রাত ৮টা পর্যন্ত ২১০১ ট্রিপে প্রায় ১০ হাজার ৩৭৪ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।

সোমবার সারাদিন ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং সরাসরি তদারকি করেন। দুপুর ২টায় মিরপুরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে মিরপুর এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে তিনি কালশী, বনানী, গুলশান, হাতিরঝিল, মধুবাগ, মগবাজার, রামপুরা, মালিবাগ, খিলগাঁও, বাড্ডা, বারিধারা প্রগতি সরণিসহ উত্তরা এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম রাত ৮টা পর্যন্ত সশরীরে পরিদর্শন করেন।

এছাড়াও ডিএনসিসির দশটি অঞ্চলের তদারকির জন্য দশজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে দশটি গ্রুপ গঠন করা হয়। ১০টি গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীসহ অন্যান্য বিভাগীয় প্রধানরা। দশটি গ্রুপ ডিএনসিসির দশটি অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বর্জ্য অপসারণে ১০ হাজারের বেশি কর্মী কাজে নিয়োজিত ছিল। গুলশান নগর ভবনে কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের হটলাইন নম্বর ১৬১০৬। পরিদর্শন শেষে ডিএনসিসি মেয়র বর্জ্য বিভাগকে এবং তদারকির জন্য গঠিত দশটি গ্রুপকে আগামীকালও কোরবানির বর্জ্য দ্রুত সময়ে পরিষ্কার করার নির্দেশ দেন।

এদিকে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অপসারণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তার অনেক আগেই কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে সক্ষম হবে বলে মন্তব্য করেছেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

সোমবার (১৭ জুন) দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের শীতলক্ষ্যা হলে স্থাপিত কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে অনলাইন প্লাটফর্মে যুক্ত হয়ে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপনে সৃষ্ট বর্জ্যের আনুষ্ঠানিক অপসারণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, "আমাদের এবারের প্রস্তুতি আগেরবারের চাইতে ভালো। আমাদের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে আমরা অনেক যান-যন্ত্রপাতি আমাদের বহরে সংযোজন করেছি। আমাদের পূর্বের যে অভিজ্ঞতা তার আলোকে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইতোমধ্যে অনেক দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলে রূপান্তরিত হয়েছে। আপনারা লক্ষ্য করেছেন, আমাদের কাউন্সিলর, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুপুর ২টার জন্য অপেক্ষা না করে তার আগেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। আমরা এবার আত্মবিশ্বাসী যে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছি, তার অনেক আগেই আমরা ঢাকা শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে পারবো।"