ট্যুরিস্ট ভিসায় নেওয়া হয় লিবিয়া, এরপর...

৪ লাখ টাকায় নরসিংদীর রোমেল মিয়াকে (৩৪) লিবিয়া নেওয়ার চুক্তি হয়। ৬ মার্চ দুই লাখ টাকা পরিশোধ করেন রোমেল। এরপর ১৪ মার্চ ১ লাখ ২৪ হাজার টাকার সমপরিমাণ ডলার নিয়ে রহমত উল্লাহ ও বিল্লাল মিয়ার সঙ্গে রওনা দেন রোমেল। তাকে একটি কার্পেট কোম্পানিতে চাকরি দেওয়া কথা বলে ট্যুরিস্ট ভিসায় দুবাই-মিসর হয়ে নিয়ে যাওয়া হয় লিবিয়ায়। তবে সেখানে গিয়ে রোমেল বুঝতে পারেন তিনি অপরহণকারীদের কবলে পড়েছেন। তাকে লিবিয়া নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা সবাই পাচারকারী চক্রের সদস্য।

চক্রটি রোমেলকে আটকে রেখে নির্যাতন করে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না পাঠালে কখনও হাত কেটে ফেলবে, কখনও মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিতে থাকে। নিম্নবিত্ত রোমেলের পরিবার এত টাকা জোগাড় করতে না পেরে নরসিংদী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দ্বারস্থ হয়।

সম্প্রতি ঘটনার তদন্তে নেমে দেশে অবস্থানরত এই সংঘবদ্ধ চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করে পিবিআই। গ্রেফতার হলো- চক্রের সন্দেহভাজন মূলহোতা সোহেল (২৪), ওয়াসিম হোসেন (২৮) ও আকারিছ মিয়া (৫৪)।

লিবিয়ায় পাচারকারী সন্দেহে গ্রেফতার ব্যক্তিরা

মঙ্গলবার (৪ জুন) রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপার মো. এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, রোমেলকে টুরিস্ট ভিসায় দুবাই-মিসর হয়ে নিয়ে যাওয়া হয় লিবিয়ায়। সেখানে নিয়ে তাকে আটকে রেখে স্বজনদের ভিডিও কলে রেখে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ১০ এপ্রিল রোমেলের ভাই বাবুল ও তার স্বজনরা পিবিআই কার্যালয়ে এসে বিষয়টি জানান। টাকা না পাঠালে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। ঘটনাটি পুলিশকে জানালে রোমেলকে হত্যা করা হবে বলে জানায় চক্রের সদস্যরা।

পরে পিবিআইয়ের তৎপরতা গোপন রেখে জিম্মিকারীদের দেওয়া চারটি বিকাশ নম্বরে দেড় লাখ টাকা পাঠানো হয়। চক্রটি টাকা রিসিভ করে আরও টাকা পাঠাতে তাগাদা দেয়। এ পর্যায়ে পিবিআইয়ের তিনটি টিম একযোগে ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের ভৈরব এবং নরসিংদীর রায়পুরা থানা এলাকায় অভিযান চালায়। এসময় ওয়াসিম হোসেন ও আকারিছ মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৯টি মোবাইল সেট, মুক্তিপণের দেড় লাখ টাকা ও বিকাশ সিমসহ মোট ২২টি সিম কার্ড জব্দ করা হয়।

লিবিয়ায় পাচারকারী সন্দেহে গ্রেফতার ব্যক্তি

এসময় পিবিআই তথ্য পায়, জিম্মিকারীদের মূলহোতা সোহেল বাংলাদেশে রয়েছে। সে যাতে পালাতে না পারে সেজন্য সব বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে চিঠি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে ১৯ এপ্রিল সোহেল দেশ থেকে দুবাই পালিয়ে যাওয়ার জন্য হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে। পরে সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে পিবিআই।

২৪ মে দেশে ফিরে আসেন রোমেল মিয়া

সোহেলকে রিমান্ডে নিলে সে অনেক তথ্য দেয়। পিবিআইয়ের তৎপরতায় সোহেলের মোবাইল দিয়ে লিবিয়ায় অবস্থানরত চক্রের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার পর রোমেলকে ছাড়তে রাজি হয় অপহরণকারীরা। অনেক নাটকীয়তার পর, সোহেলের কথামতো রোমেলকে একদিন ঘুরিয়ে রাত ৩টায় ত্রিপলিতে রহমত উল্লাহ নামে এক ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেয়। এরপর তাকে ত্রিপলি থেকে দেশে আনার জন্য পাসপোর্ট-ভিসা ও বিমান টিকিটের জটিলতা দেখা দেয়। পিবিআই লিবিয়ার অ্যাম্বাসিতে একাধিকবার কথা বলে অনেক চেষ্টার পর ২৪ মে রোমেলকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।

পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, আরও ১১ বাংলাদেশিকে জিম্মি অবস্থায় দেখেছেন বলে জানান ভুক্তভোগী রোমেল। বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে। এছাড়া তদন্তে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ব্যাপক আর্থিক ট্রানজেকশন যাচাই করা হচ্ছে।