‘গৃহশ্রমের বার্ষিক অর্থমূল্য ৫০ হাজার কোটি টাকা’, নীতিমালা বাস্তবায়নের দাবি

আন্তর্জাতিক গৃহশ্রমিক দিবস আগামী ১৬ জুন। সরকারি কোনও পরিসংখ্যান না থকলেও সারা দেশে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ গৃহশ্রমের সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশে এ খাতে কর্মরতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। তারা সূর্যোদয় থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নাগরিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের শ্রমের অর্থমূল্য প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। অথচ এ আয় দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে গণ্য করা হয় না।

মঙ্গলবার (৪ জুন) সকাল ১১টায় রাজধানীর তোপখানা রোডের একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন জাতীয় গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুর্শিদা আখতার।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের সবচেয়ে অবহেলিত, বঞ্চিত শ্রমশক্তির নাম গৃহশ্রমিক। তাদের শ্রমের কোনও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নাই। অথচ তাদের শ্রম ছাড়া নাগরিক জীবন অচল। এই শ্রমিকদের জীবন দক্ষতা ও পেশাগত উন্নয়ন করতে পারলে এই আয়ের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে। এর জন্য রাষ্ট্রীয় আইন, নীতিমালা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০১৫ সালে একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করলেও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নাই।

‘বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ ধারা-১’ উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬’ ধারায় (ণ) বলা হয়েছে, গৃহশ্রমিকদের জন্য এই আইন প্রযোজ্য নয়। এর চেয়ে নিষ্ঠুর রসিকতা কী হতে পারে। অপরদিকে ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ‘গৃহশ্রমিকের জন্য শোভন কাজ’ শীর্ষক কনভেনশন-১৮৯ গ্রহণ করলেও আজ পর্যন্ত সরকার কনভেনশনটি অনুসমর্থন করেনি। আইনি সুরক্ষা না থাকার কারণে প্রতি বছর শতাধিক গৃহশ্রমিক অমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের মৃত্যুর দায় সরকার ও রাষ্ট্র এড়াতে পারে না।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেট পেশ করা হবে। বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা বলয় বৃদ্ধি করা হবে কিন্তু এই সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মধ্যে গৃহশ্রমিকরা অন্তর্ভুক্ত হবেন না। কারণ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে মূলত গ্রামীণ দরিদ্রদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু গৃহশ্রমিকদের জন্ম গ্রামে হলেও কর্ম শহরে।

ইউনিয়নের নেতারা বলেন, বাজেটে গৃহশ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ এবং নিবন্ধন ও নিরাপত্তার জন্য অবিলম্বে গৃহশ্রমিকদের শ্রমআইনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সার্বজনীন পেনশন স্কিমে গৃহশ্রমিকদের জন্য বিশেষ সুবিধা বিধান চালু এবং গৃহশ্রমিকের জন্য প্রণীত আইএলও কনভেনশন ১৮৯ দ্রুত অনুসমর্থন এবং শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্তির দাবিও জানান তারা। 

সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন– সংগঠনের সভাপতি মমতাজ বেগম, আবুল হোসাইন, মোস্তফা আলমগীর রতন, আমেনা বেগম, মিনারা বেগম, কাজী রেনু প্রমুখ।