ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণ মামলার আসামি সেলেস্টি রহমান ওরফে সিলিস্তা রহমান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। রিমান্ড চলাকালে সিলিস্তা রহমান স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হলে সোমবার (৩ জুন) তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান।
আবেদনের পর ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এরপর সন্ধ্যায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
এই মামলায় শিমুল ভু্ঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভু্ঁইয়া ওরফে আমান উল্যাহ সাঈদ, তানভীর ভুঁইয়া ও সিলিস্তা রহমান প্রথম দফায় ৮ দিনের রিমান্ড শেষে দ্বিতীয় দফায় ৫ দিনের রিমান্ডে ছিলেন।
গত ২২ মে সন্ধ্যায় আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস শেরেবাংলা নগর থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় এজাহারে বলা হয়, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের বাসায় আমরা সপরিবারে বসবাস করি। ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা আনোয়ারুল আজিম আনার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ১১ মে বিকাল পৌনে ৫টার দিকে বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বললে তার কথাবার্তা কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাই। ১৩ মে বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে উজির মামার হোয়াটসঅ্যাপে একটি খুদে বার্তা আসে। এতে লিখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি রয়েছে। আমি অমিত সাহার কাজে নিউ টাউন যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নাই। আমি পরে ফোন দেবো।’ এছাড়া আরও কয়েকটি বার্তা আসে। খুদে বার্তাগুলো আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজ করতে থাকি। কোনও সন্ধান না পেয়ে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস বাদী হয়ে ভারতীয় বরাহনগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপরও আমরা খোঁজাখুঁজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারি, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে বাবাকে অপহরণ করেছে।
উল্লেখ্য, অনোয়ারুল আজীম আনার ঝিনাইদহ-৪ আসনে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ থেকে পর পর তিনবার নির্বাচিত এমপি। গত ১২ মে চিকিৎসার কথা বলে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান তিনি। সেখানে বরাহনগর থানার মগুলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হলে তার আর খোঁজ মেলেনি। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ ছিলেন আনার।
২২ মে বিকালে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের মহাপরিদর্শক (সিআইডি) অখিলেশ চতুর্বেদী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছি, যার ভিত্তিতে মনে করছি আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করা হয়েছে। তবে মরদেহ এখনও পাওয়া যায়নি।