ঘূর্ণিঝড় রিমাল ও অতিবৃষ্টির প্রভাবে দেশের কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৪৮টি জেলার কৃষিতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে উপকূলীয় অন্তত দশটি জেলার ফসল ও জমির। তবে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য পেতে আরও ৭-৮ দিন সময় লাগতে পারে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।
গত রবিবার (২৬ মে) ও সোমবার (২৭ মে) ঘূর্ণিঝড় রিমাল ও অতিবৃষ্টিতে ‘প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত ফসলি জমির পরিমাণ এক লাখ তিপ্পান্ন হাজার ছয়শ ত্রিশ হেক্টর’ বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী।
বুধবার (২৯ মে) বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, এখনও ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র আসেনি। আগামী রবিবার একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন পাওয়া যেতে পারে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমাল ও অতিবৃষ্টিতে ফসলের মাঠের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। বুধবার সকালে যে চিত্র এসেছে, সন্ধ্যায় মাঠকর্মীদের পাঠানো তথ্যে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে। এক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার নাগাদ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে, এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বুধবার দুপুর পর্যন্ত খবর ছিল— এখন মাঠে দণ্ডায়মান ফসলের জমির পরিমাণ প্রায় ১৪ লাখ ৩০ হাজার পঁয়ষট্টি হেক্টর এবং আক্রান্ত ফসলি জমির পরিমান এক লাখ তিপ্পান্ন হাজার ছয়শ ত্রিশ হেক্টর। যদিও এদিন সন্ধ্যার পর আক্রান্ত ফসলি জমির পরিমাণের হিসাব বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৭১ হাজার ১০৯ হেক্টরে।
সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী জানান, ঝড়ে গ্রীষ্মকালীন ফসলের অন্তত ৪৫ হাজার হেক্টর জমি ক্ষতির মুখে পড়েছে। ফসলের মধ্যে পাট, তিল, মৌও রয়েছে। এছাড়া কলা, পেঁপেসহ নানা ধরনের সবজির জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার হেক্টর।
প্রসঙ্গত, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে এ পর্যন্ত মোট ১৬ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র (এনডিআরসিসি)।
গত রবিবার ও সোমবার ঘূর্ণিঝড় রিমাল ও অতিবৃষ্টিতে প্রাথমিকভাবে ৪৮টি জেলার কৃষিতে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাব পড়েছে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আক্রান্ত হয়েছে উপকূলীয় বরিশাল অঞ্চলের ৬টি জেলা (বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা) এবং খুলনা অঞ্চলের ৪টি জেলা (খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল), চট্টগ্রাম অঞ্চলের নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজার।
সরেজমিন উইংয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এখন মাঠে দণ্ডায়মান ফসলি জমির পরিমান প্রায় ১৪ লাখ ৩০ হাজার ৬৫ হেক্টর এবং আক্রান্ত ফসলি জমির পরিমান প্রায় ১ লাখ ৭১ হাজার ১০৯ হেক্টর। এরমধ্যে আউশ বীজতলা ১০ হাজার ৮৪৩ হেক্টর, ২১ হাজার ৪৩৪ হেক্টর আউশের জমি, পাট ২৯ হাজার ৭৪৯ হেক্টর, মরিচ ২৪৪৪ ও পান ৭০৫৮ হেক্টর মাঠের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফলের মধ্যে আম, লিচু, কলাসহ মোট ১৭৫৪৩ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফল দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানায় সূত্রটি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, বৃষ্টি বন্ধ হলে এবং সাত-আট দিন পর ক্ষতির মাত্রাটা প্রকৃতপক্ষে বোধগম্য হবে।