এখনও পানির নিচে দক্ষিণ সিটির অনেক এলাকা

অলিগলিতে পানি, রাস্তায় পানি, দোকানে পানি, ঘরের মধ্যে হাঁটু পানি। চারদিকে ড্রেনেজের পয়ঃবর্জ্য মিশ্রিত দুর্গন্ধময় পানি। এর মধ্যে দিয়েই চলাফেরা করছে দক্ষিণ কুতুবখালী, যাত্রাবাড়ী এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধের ভেতরের এলাকায় বসবাসরত লক্ষাধিক বাসিন্দা। জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচতে এবং বাসাবাড়ির মূল্যবান মালামাল রক্ষা করতে সেখানকার বাসিন্দারা সেচ দিয়ে ঘর থেকে পানি বের করছেন।

সরেজমিনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৮, ৫০, ৬১, ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে জলাবদ্ধতার চিত্র দেখা যায়। এর বাইরে ৫২, ৫৩ ও ৫৮ থেকে ৭০ নম্বরসহ ১৮টি ওয়ার্ড এবং নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার কুতুবপুর ও মুন্সিবাগের প্রধান সড়ক, অলি-গলি, মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, শিল্প-কারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা পানিতে ডুবে গেছে।

পানিবন্দি দক্ষিণ কুতুবখালীর বাসিন্দা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ড্রেনের অলিগলির ময়লা পানি ঘরের মধ্যে ঢুকে গেছে। রাত থেকে স্ত্রী আর ছেলেমেয়েরা পানি বের করছে। পানি নিষ্কাশন না হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ড্রেনগুলো মানুষের ফেলা ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে, যার কারণে বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর দক্ষিণ কুতুবখালী এলাকায় ঘরের ভেতর ঢুকে পড়েছে বৃষ্টির পানি (ছবি: প্রতিবেদক)

দক্ষিণ কাজলার বাসিন্দা হানিফ বলেন, খাল দিয়ে ঠিকমতো পানি যায় না। ড্রেনগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। তাছাড়া খালগুলোর ওপর নির্মাণ করা ব্রিজগুলো নিচু ও সরু হওয়ায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতি বছরই এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়। কিন্তু কেন যে এর কোনও সমাধান সিটি করপোরেশন খুঁজে বের করতে পারছে না তা বোধগম্য নয়।

জলাবদ্ধতার বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাসুম মোল্লা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাত থেকে পানি সরানোর কাজ চলছে, এখনও কাজ চলমান আছে। এখানকার খাল দিয়ে পানি যাচ্ছে না, মানুষের ফেলা বর্জ্যের কারণে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। খাল দিয়ে সঠিকভাবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থার কথাও জানান এই কাউন্সিলর।

দক্ষিণ কুতুবখালী এলাকার বাসিন্দারা জলাবদ্ধতা নিয়ে আছেন বিপাকে (ছবি: প্রতিবেদক)

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ডিএনডির এই এলাকাগুলো অন্যান্য এলাকার চেয়ে নিচু। এসব ওয়ার্ড ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার রাস্তা, ড্রেনেজ, সড়কবাতি স্থাপনসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন প্রতিটি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা নিরসন করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন জনপ্রতিনিধিরা।

বৃষ্টি থেকে যাওয়ার একদিন পরও জুরাইনে জলমগ্ন বিভিন্ন রাস্তা (ছবি: মিজানুর রহমান)

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জলাবদ্ধতা ও জলজট সৃষ্টির বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের বলেন, জলাবদ্ধতা ও জলজট নিরসনে গঠিত ৯১টি দলের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২ হাজার ৫০০ জন পরিচ্ছন্নকর্মী নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে। গতকাল স্থাপিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষে মোট (মঙ্গলবার বিকাল ৫.৩০টা পর্যন্ত) ১২০টি ফোন কল এসেছে। এর মধ্যে অতিবৃষ্টিজনিত জলজট সংক্রান্ত ফোন কলের সংখ্যা ৭৮টি। এসব কলের পর সেসব স্থানে করপোরেশনের লোকবল কাজ করছে। এছাড়াও ৪২টি ফোন কল ছিল ঝড়ে গাছ পড়ে যাওয়া সংক্রান্ত।

তিনি আরও বলেন , করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় ৯৪টি বড় গাছ পড়ে গিয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ গাছ কেটে সরানো হয়েছে। আরও কিছু গাছ সরানোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পড়ে যাওয়া ১টি গাছ অপসারণ করার কার্যক্রম চলমান। মোট ৬টি সড়কবাতি পোল পড়ে গেছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেসব পোল প্রতিস্থাপন ও মেরামত প্রক্রিয়াধীন।