আম রফতানি বাড়াতে অঞ্চলভিত্তিক প্যাকিং হাউজ তৈরির দাবি

বাংলাদেশের মতো বড় কৃষিপ্রধান দেশে সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজ মাত্র একটি। ফলে আম কিংবা অন্যান্য কৃষিপণ্য রফতানি করা কঠিন। তাই আম রফতানির পথ সুগম করতে অঞ্চলভিত্তিক প্যাকিং হাউজ তৈরির তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে এ খাতের সার্বিক উন্নয়নে ৮ দফা দাবি জানিয়েছে আম চাষি, ব্যবসায়ী ও রফতানিকারকরা।

সোমবার (২৭ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম, ঢাকা আয়োজিত 'বাংলাদেশে আম উৎপাদন: সমস্যা ও সম্ভাবনা' শীর্ষক জাতীয় আম সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

সেমিনারে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের মতো এত বড় কৃষিপ্রধান দেশে সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউজ মাত্র একটি। এটি আন্তর্জাতিক মানের তো দূরের কথা স্থানীয় মানেরও নয়। একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ বা অন্য প্রান্তিক জেলায় উৎপাদিত আম কিংবা অন্যান্য কৃষিপণ্য রফতানি করা কঠিন। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় আরও তিনটি এ ধরনের প্যাকিং হাউজ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১০ কোটি টাকায় একেকটি প্যাকিং হাউজ স্থাপন সম্ভব। তাই দ্রুত তিনটিসহ অন্যান্য অঞ্চলে আরও এ ধরনের প্যাকিং হাউজ গড়ে তোলা দরকার।

তিনি বলেন, সরকার ব্যবসা করে না, তবে ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করে দেয়। অতীতের অভিজ্ঞা থেকে বলা যায়- এ ধরনের প্যাকিং হাউজ ব্যবস্থার দায়িত্ব বেসরকারি খাতের উপর ছেড়ে দেওয়াই উচিত।

সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে বড় আমের বাজার রয়েছে। তারপরও উৎপাদিত আমের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে রফতানি বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে তিনি আমদানি চাষিদের সমবায় সমিতির মাধ্যমে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া অর্জনে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মু. জিয়াউর রহমান বলেন, আমাদের দেশে এখনও সনাতন পদ্ধতিতে আম চাষ হয়। বিশেষ করে আম গাছ থেকে নামানো ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে চাষিদের তেমন প্রশিক্ষণ নেই। আগামীতে আমের টেকসই উন্নয়নে এসব ক্ষেত্রে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন,  জিএপি (গুড অ্যাগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসেস) স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে আম চাষের জন্য একটি গাইডলাইন করে দেবে সরকার। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত আম বিশ্ববাজারে নিরাপদ খাদ্য হিসেবে সহজেই রফতানি সম্ভব। আমের গুণমান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করতে নেদারল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া আমের বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষায় ছয়জনকে বিভিন্ন দেশে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য পাঠানো হচ্ছে। এদিকে দেশের সুমিষ্ট আম বিশ্বের কাছে তুলে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের একটি বাগানে নিয়ে যাওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ অ্যাগ্রো–কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রোগবালাই দূর করতে গিয়ে ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থসমৃদ্ধ মানহীন কীটনাশক ব্যবহার আমের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। বাংলাদেশে এখনও অনেক মানহীন ক্ষতিকর কীটনাশক আমদানি ও ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া রয়েছে। এসব কীটনাশক ব্যবহারের ফলে আমসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য কতটুকু বিষাক্ত হচ্ছে তাও পরিমাণের কোনও উপায় নেই। তাই আন্তর্জাতিক বিশ্ব আমকে নিরাপদ খাদ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। তাই এ কীটনাশক ব্যবস্থাপনায় সরকারের আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।

মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (সাবেক আম গবেষণা কেন্দ্র) চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুখলেসুর রহমান বলেন, বিশ্বে আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নবম হলেও প্রধান দশটি রফতানিকারক দেশের তালিকায় এখনও স্থান পায়নি। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সঠিক ব্যবস্থাপনায় আম রফতানি বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। 

এ সময় চাষি ও ব্যবসায়ীরা আমের সার্বিক টেকসই উন্নয়নে কম মূল্যে প্রযুক্তি নিশ্চিত, প্রশিক্ষণের সংখ্যা না বড়িয়ে গুণগত মান বাড়ানো, সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করে কত কেজিতে মন হবে তা নিশ্চিত করাসহ আট দফা দাবি তুলে ধরেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ ডিন অধ্যাপক ড. মো. গেলাম রাব্বানী। বাংলাদেশ অ্যাগ্রো–কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন সিজেএফডি সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন। সিজেএফডির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আনোয়ার হকের সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক সবুজ। সেমিনারে ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, আমচাষিসহ কৃষি খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত থেকে তাদের মতামত তুলে ধরেন।