অগ্নিকাণ্ডের পরও পাল্টায়নি মহানগর শপিং কমপ্লেক্স

‘চিন্তাই করিনি আগুন বঙ্গবাজার থেকে এই মার্কেটে এসে লাগবে। আমাদের মার্কেট পুরোটাই আগুনে পুড়ে যায়। আমার ৭০-৮০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এত বড় ক্ষতির মুখে পড়বো কে জানতো! পাশের মার্কেটের ব্যবসায়ী-কর্মচারীরা আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন, আমরা তাও পাইনি। সিটি করপোরেশন থেকে দেওয়া হয়েছিল ১৪ কেজি চাল-ডাল। আর কিছুই পাইনি। জেলা প্রশাসক ২৫ হাজার টাকা দেন, সেটাও আমরা পাইনি। ফের ঋণ করে ব্যবসায় বসেছি। এবার সরকার মার্কেটটা করে দিলে ভালো হয়।’

বাংলা ট্রিবিউনকে এই কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর বঙ্গবাজারের পাশে মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের কাপড় ব্যবসায়ী মুসলিম মিয়া। প্রাইম এক্সক্লুসিভ নামের একটি দোকান আছে তার। ১১ বছর ধরে সেখানে বাচ্চাদের টি-শার্টের পাইকারি ব্যবসা তার। গত বছর ৪ এপ্রিলের অগ্নিকাণ্ডের কথা ভাবলে এখনও আঁতকে উঠেন মুসলিম মিয়া।

দেশের অন্যতম বড় কাপড়ের মার্কেট ঢাকার বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল। ওই দিন ভোরে লাগা আগুনে বঙ্গবাজার সংলগ্ন আরও চারটি মার্কেট পুড়ে যায়। ক্ষয়ক্ষতির দিক থেকে বঙ্গবাজারের পরেই রয়েছে মহানগর শপিং কমপ্লেক্স। সেখানে প্রায় ৬০০ দোকান পুড়ে ছাই হয় বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

গতবছর পুড়ে ছাই হয়ে যায় মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের ছয় শতাধিক দোকান

গত এক বছরে মহানগর শপিং কমপ্লেক্স ছাড়া বঙ্গবাজার সংলগ্ন ক্ষতিগ্রস্ত অন্য সব মার্কেটই বলতে গেলে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এরইমধ্যে টেকসই অবকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়েছে বঙ্গবাজারে। ব্যবসা শুরু করেছেন  অন্যান্য মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। শুধু মহানগর শপিং কমপ্লেক্সেরই হচ্ছে না কোনও পরিবর্তন।

এই মার্কেটটি নিয়ে আসলে কী হবে– এ নিয়ে এখনও রয়েছে অনিশ্চয়তা। এখানকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে পুনর্বাসনসহ স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু নেই কোনও অগ্রগতি।

গত ২১ মে মহানগর শপিং কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা খুপড়ির মতো অস্থায়ী দোকান তৈরি করে ব্যবসা করছেন। তারা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, অগ্নিঝুঁকি নিয়েই জীবিকার তাগিদে দোকান সাজানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে এখনও অগ্নিকাণ্ডে আর্থিক ক্ষতি ও আতঙ্ক তাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে।

অস্থায়ীভাবে নিজেদের মতো করে দোকান মেরামত করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

ওই মার্কেটের নিচতলার ব্যবসায়ী রেজাউল করিম নাহিয়ানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তার দুটি দোকানে (আদুরী ফ্যাশন) কয়েক লাখ টাকার মাল ছিল। নাহিয়ান বলেন, আমরা ছেলেদের গেঞ্জি বিক্রি করি। ১৫ বছর ধরে ব্যবসা করছি। সবই আগুনে পুড়েছে। বছরের পর বছর রাতদিন কাজ করে, পরিশ্রম করে ব্যবসা দাঁড় করিয়েছিলাম। আগুন আমাদের সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। নতুনভাবে দোকান নিয়ে বসলেও বিক্রি কমে গেছে। আগের মতো পার্টি আসে না।   আশপাশের মতো এই মার্কেটটিও নির্মাণ করে দেওয়া হোক।

আরেক ব্যবসায়ী পাসওয়ার্ড গ্যালারির ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শফি উদ্দিন বলেন, ২০১০ সাল থেকে এখানে ব্যবসা করছি। আমার দোকানে ২০ লাখ টাকার মাল ছিল। কিছুই বের করতে পারিনি। এখনও ১৩ লাখ টাকা দেনায় আছি। ব্যবসাও ভালো যাচ্ছে না। মার্কেটের অবস্থা ভালো না, কাস্টমার আসে না। মার্কেট নতুনভাবে নির্মাণ না করে দিলে আমরা আরও লোকসানের মুখোমুখি হবো।

এই মার্কেটের নিচতলার গ্রিন পয়েন্ট লেডিস আইটেম দোকানের ব্যবস্থাপক সোহাগ আলী। তিনি বলেন, এখানে কাপড়ের দোকানগুলোর গাদাগাদি অবস্থা।  আবার অগ্নিকাণ্ড ঘটলে সব শেষ হয়ে যাবে।

যে ক্ষতি হয়েছিল আগুনে পুড়ে, সেই ক্ষতি এখনও পুষিয়ে উঠতে পারেননি কেউ

বিসমিল্লাহ লেডিস টপসের মালিক মেহেদী মুরাদ বলেন, আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। আমার দোকান ছিল বঙ্গমার্কেটে। নতুন করে এখানে এসে ব্যবসা শুরু করেছি। মার্কেট নতুন করে নির্মাণ করে দিলে ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারবো বলে জানান তিনি।

মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের বিজনেস অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান বলেন, মালামালসহ সব দোকানই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ৬০০ দোকান মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অগ্নিকাণ্ডের পর বাঁশের খুঁটি পুঁতে, কাগজ-পলিথিন টানিয়ে নতুন করে ব্যবসা করছেন অনেকে।

আবদুর রহমান বলেন, মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের জায়গাটি বাংলাদেশ রেলওয়ের। ইজারা নিয়ে আমরা ব্যবসা করছি। মার্কেটটির অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য রেলওয়ের সঙ্গে আমরা ১০ বছর ধরে যোগাযোগ করে আসছি। তারা আইনগত কারণ দেখিয়ে বছরের পর বছর দেরি করছে। এখানে নতুনভাবে অবকাঠোমা তৈরি করে ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের দাবি আমাদের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) সরদার সাহাদাত আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার জানা মতে মার্কেটটি যখন তৈরি হয়েছিল, তখন বলা ছিল একতলা অবকাঠামোর কথা। এখন ব্যবসায়ীরা নতুনভাবে তৈরির কথা বলছেন। তারা একটি আবেদন নিয়ে এসেছিলেন। তবে সেটি নতুন করে লিখে জমা দিতে বলেছি। আবেদনটি পেলে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবো। তার নির্দেশনা এবং রেলওয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।