অপরিপক্ব ফলে সয়লাব রাজধানীর বাজার, বাড়ছে ‘স্বাস্থ্যঝুঁকি’

জৈষ্ঠ মাসের শুরু হয়েছে মাত্র তিন দিন আগে। এখনও গাছে গাছে ঝুলছে অপরিপক্ব আম, কাঁঠাল, লিচুসহ অন্যান্য মৌসুমি ফল। পরিপক্ব হলে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে এসব সুস্বাদু ফল বাজারে আসার কথা। কিন্তু তার আগেই অপরিপক্ব মৌসুমি ফলে ভরে গেছে রাজধানীর ফল বাজারগুলো।

সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকেই এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অপরিপক্ব বিভিন্ন জাতের আম, লিচু, কাঁঠাল বাজারজাত করছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে রাজধানীর ফলের আড়ত ও ফলের বাজারগুলোতে আসছে হাজার হাজার মণ আম, লিচু, কাঁঠাল, জামরুল, কলাসহ নানা রকমের ফল। এসব অপরিপক্ব ফল খেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে মানুষ।

শুক্রবার (১৭ মে) রাজধানীর বাদামতলী ফলের আড়তসহ সদরঘাট ও গুলিস্তানের ফল বাজার ঘুরে দেখা যায়, অপরিপক্ব লিচু, আম, কাঁঠাল, জামরুলসহ বিভিন্ন ধরনের ফল বিক্রি হচ্ছে। দামও বেশ চওড়া। তবে দাম বেশি হলেও বছরের প্রথম ফল বলে অনেকেই কিনছেন শখে। ফলের আড়তগুলোতে এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে অপরিপক্ব ফল বিক্রি করলেও সেদিকে প্রশাসনের সুদৃষ্টি নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাদামতলী ফল আড়তের ব্যবসায়ী আকবর হোসেন বলেন, ‘পরিপক্ব হোক আর অপরিপক্ব হোক এখন সব ফলের চাহিদা বেশি। বিশেষ করে লিচু, আম ও কাঁঠাল বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। ১০০টি মাদ্রাজি লিচু পাইকারিতে ২৫০ টাকা এবং মোজাফফর নামের লিচুর শ’ ৩০০ টাকায় বিক্রি করছি। গত এক সপ্তাহ ধরে এই লিচু বিক্রি করছি। অন্যদিকে পাইকারি আমের কেজি ১১০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত। কাঁঠাল সাইজ অনুযায়ী বিক্রি হয়। মাঝারি সাইজের কাঁঠালের শ’ পাইকারি ১২-১৩ হাজার টাকা বিক্রি করছি। তার চেয়ে একটু বড় সাইজের কাঁঠাল আরও দুই-তিন হাজার বেশি।’

অপরিপক্ব ফলের বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে আফসার উদ্দিন নামের একজন ক্রেতা বলেন, ‘গতকাল শখ করে এক কেজি পাকা আম কিনেছি। কিন্তু মনে হলো জোর করে আমগুলো পাকানো হয়েছে। পাকা আমের কোনও স্বাদই নেই। বাচ্চাদের জোরাজুরিতে কেনা। নয়তো কিনতাম না। বাজারে এখনও গাছ পাকা আম আসেনি। আশা করি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে আসবে।’

অভিষেক মল্লিক নামের এক ক্রেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জ্যৈষ্ঠ মাস মধুর মাস। কারণ এই মাসে বিভিন্ন ধরনের রসালো, মিষ্টি ও সুগন্ধি ফল উঠতে শুরু করে। কিন্তু এখনকার বাজারের ফলগুলো তেমন রসালো না, মিষ্টিও না। কারণ এসব ফল অপরিপক্ব থাকতেই গাছ থেকে নিয়ে বাজারজাত করা হয়েছে। যার কারণে এখনকার ফলে অরজিনাল যে স্বাদ সেটা নেই।’

অপরিপক্ব ফলের আমদানি বন্ধের বিষয়ে বাজার তদারকির প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বেলায়েত হোসেন বাপ্পি নামের এক ভোক্তা বলেন, ‘ভোক্তা অধিকারের উচিত নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ করা। এখন ফলের মৌসুম। বাজারে ফল আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোন ফলগুলো পরিপক্ব আর কোনগুলো অপরিপক্ব এই বিষয়টা দেখা প্রয়োজন। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী লাভের আশায় পাকার আগেই অপরিপক্ব ফল বাজারে ছেড়েছে। ফলে এসব ফল খেয়ে ভোক্তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। অপরিপক্ব ফল যেন বাজারে না আসতে পারে সেজন্য সরকারিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’

অপরিপক্ব ফলের ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. কামরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অপরিপক্ব ফল নিশ্চয়ই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অপরিপক্ব ফল প্রিজার্ভ করার জন্য বাংলাদেশে যেটা ব্যবহার করা হয় সেটা আরও বেশি ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যেমন কলার কথাই ধরি- অপরিপক্ব কলাতে যে কার্বাইড দেওয়া হয় তা অত্যন্ত ক্ষতিকর। যেকোনও ফল অপরিপক্ব অবস্থায় প্রিজার্ভ করার জন্য যে মেডিসিন ব্যবহার করা হয় তা শিশুদের স্বাস্থ্যহানি, কিডনি ও লিভারের সমস্যা, এমনকি বাচ্চাদের বেড়ে উঠাতেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।’

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৩ মে রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ মিলনায়তনে ‘মৌসুমি ফল পাকাতে বিভিন্ন রাসায়নিকের ব্যবহার ও জনস্বাস্থ্য’ শীর্ষক এক কর্মশালায় ইথোফেন অথবা কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম নিরাপদ বলে দাবি করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে গঠিত প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. মাহফুজুল হক তখন বলেছিলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ইথোফেন-কার্বাইড দিয়ে আম পাকানো ক্ষতিকর নয়।’