‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি ছিল ছোট গল্পের মতো’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটি ছিল ছোট গল্পের মতো। স্বাধীনতার কথা বলা হলেও তা সরাসরিভাবে বলা হয়নি।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বিকাল ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের কনফারেন্স রুমে (কারাস ভবন) এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) আয়োজনে ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ: রাষ্ট্রগঠন ও আন্তর্জাতিক আইনে গুরুত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ড. আতিউর রহমান বলেন, ৭ মার্চ নিয়ে একটি অনলাইন জরিপ চালিয়েছিলাম। যেখানে ৮০০ এরও বেশি তরুণ অংশ নেয়। সেখানে প্রশ্ন করেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর নাম শুনলে কোন দৃশ্যটি চোখে সবার আগে ভেসে ওঠে। ৭৪ শতাংশ লোকই বলেছিল  বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চে দেওয়া সেই ভাষণের দৃশ্যটি তাদের চোখে সর্বপ্রথম ভেসে ওঠে।... আমরা যখন স্বাধীনতার কথা বলি, সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর মুখ ভেসে ওঠে। স্বাধীনতার প্রশ্নে-বাঙালির প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপসহীন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) আয়োজনে আলোচনা সভা

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আমাদের অস্তিত্বের মাঠ। ৭ মার্চের আগেই বাঙালিদের হত্যা করা শুরু হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে লালমনিরহাট এবং চট্টগ্রামের দিকে বিহারিরা নির্মমভাবে বাঙালিদের মারতে লাগে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। তবুও আমাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়নি।

৭ মার্চের আগের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমি সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হওয়ার সুবাদে রোকেয়া হলে থাকতাম। ৭ মার্চ ভোর আনুমানিক ৫টার দিকে আমার দাদু শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত আমাকে কুমিল্লা নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার মাকে পাঠায়। আমি প্রথমে যেতে রাজি না হলে পরে হলের প্রাধ্যক্ষের কথায় গাড়িতে উঠে কুমিল্লায় চলে যাই।  কুমিল্লায় ফিরে যাওয়ার পর দাদুকে জিজ্ঞেস করি কেন আমাকে ফিরে যেতে বলা হলো? প্রত্যুত্তরে দাদু আমাকে বললেন, ‘আজ শেখের ব্যাটা, বাঘের বাচ্চা, স্বাধীনতা ঘোষণা করবে। রক্তের বন্যা বইবে। এরপর আর কুমিল্লা-ময়নামতি ক্রস করা যাবে না। তোমাদের বয়সী ছেলে-মেয়েদের কচুকাটা করবে। তাই তোমাকে আমার ফিরিয়ে আনতেই হলো।’

তিনি বলেন, এরপর বিটিভি বন্ধ করে দেওয়া হলো। কলকাতার দেবদুলাল বন্দোপাধ্যায় এবং বিবিসি বাংলা রাত ৮টায় ভাষণটি সম্প্রচার করলো। আমার দাদা তখন অঝোরে কাঁদছেন আর বলছেন, ‘বাঘের বাচ্চা শেখের বেটা। সে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হয়ে এসেছে। ঈশ্বরই তাকে প্রেরণ করেছেন।’

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংসদ সদস্য আরমা দত্ত। সিজিএস এর পরিচালক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনের সভাপতিত্বে আরও আলোচনা করেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) সদস্য অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন। এছাড়াও ঢাবির আইন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।