রাজধানীর ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে এন্ডোস্কোপি করাতে গিয়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে রাহিব রেজার (৩১) মৃত্যুর ঘটনায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং ল্যাবএইড ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। একইসঙ্গে চিকিৎসকদের অবহেলায় মৃত্যুর ঘটনায় রাহিবের পরিবারকে ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে।
সোমবার (১১ মার্চ) রাহিবের পরিবারের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে এ রিট দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটির ওপর শুনানি হতে পারে।’
রিটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে এন্ডোস্কোপি করাতে গিয়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে রাহিবের মৃত্যু হয়। তিনি রাজধানীর স্টার্টিক ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানে প্রোডাক্ট ম্যানেজার ও আইটি কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তার স্বজনদের অভিযোগ, ল্যাবএইড হাসপাতালে পরীক্ষার রিপোর্ট না দেখেই রাহিবকে অ্যানেস্থেশিয়া প্রয়োগ করা হয়। অ্যান্ডোস্কোপি করা হয় শারীরিক জটিলতার মধ্যেই। যে কারণে তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় এবং এক পর্যায়ে শারীরিক অবস্থা আরও জটিল হলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
পেটে গ্যাসজনিত সমস্যার কারণে ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাবের (স্বপ্নীল) কাছে যান রাহিব। এরপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ল্যাবএইডে এন্ডোস্কোপি করানোর পরামর্শ দেন ডা. স্বপ্নীল।
রোগীর স্বজনরা জানান, রাহিবকে ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় খালি পেটে ল্যাবএইড হাসপাতালে আসতে বলা হয়। যথাসময়ে তিনি হাসপাতালে এলেও অ্যান্ডোস্কপি শুরু হয় রাত ১১টার দিকে। এর দেড় ঘণ্টা পরও রোগীকে বাইরে না আনা হলে একজন জোর করে এন্ডোস্কোপি রুমে ঢুকে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান। এরপর অবস্থা জটিল হলে রাহিবকে ল্যাবএইড হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। সবশেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ ফেব্রুয়ারি সকালে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এন্ডোস্কোপি করার সময় ল্যাবএইড হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন রাহিবের সহকর্মী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফারহান ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ডা. স্বপ্নীলের বিরুদ্ধে প্রায়ই শুনতাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোগীদের বসিয়ে রেখে এদিক-সেদিক চলে যেতেন। তারপরও রাহিব যেহেতু তাকে আগে দেখিয়েছে এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার কাছেই এন্ডোস্কোপি করবে, তখন আমিও সেখানে যাই। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আমরা সেখানে উপস্থিত হই এবং ডা. স্বপ্নীলের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। ১০টার দিকে তিনি আসেন। এরপর তাড়াহুড়ো করে রাহিবের পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট না দেখেই এন্ডোস্কোপি করাতে নিয়ে যায়।’