রাজধানীতে দুই ট্রেনে আগুন: এখনও অধরা মূল হোতারা

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়া হয়েছিল গত ১৯ ডিসেম্বর। এর ১৫ দিনের মাথায় চলতি মাসের ৫ জানুয়ারি রাজধানীর গোপীবাগে আগুন দেওয়া হয় বেনাপোল এক্সপ্রেসে। ভোটের আগে হরতাল-অবরোধ চলাকালে পৃথক এই দুই অগ্নিকাণ্ডে মারা যান অন্তত আট ট্রেনযাত্রী। কিন্তু দুই ঘটনার মূল হোতাদের এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কর্মকর্তারা বলছেন, বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সরাসরি আগুন দেওয়ার ঘটনায় সম্পৃক্তদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

আলোচিত এই দুই ঘটনার পর ঢাকা রেলওয়ে থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দুটির তদন্ত করছে রেলওয়ে থানা পুলিশ। ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি ফেরদৌস আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, দুটি ঘটনাতেই পৃথকভাবে দুই আসামিকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করার কাজ চলছে। নতুন করে আর কোনও আসামিকে গ্রেফতার করা যায়নি।

পুড়ে যাওয়া বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

সংশ্লিষ্টরা জানান, তেজগাঁও ও গোপীবাগে দুই ট্রেনে আগুনের ঘটনাতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের পক্ষ থেকে জড়িতদের শনাক্ত করার দাবি করা হয়। কিন্তু ঘটনার মাস পেরিয়ে গেলেও মূল হোতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।

গত ১৯ ডিসেম্বর ভোরে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় নেত্রকোনা থেকে ঢাকাগামী ট্রেন মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেয় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। এতে ট্রেনের মাঝখানের তিনটি বগি পুড়ে যায়। আগুনে এক মা ও শিশুসহ চার জন নিহত হন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধারনা, ট্রেনটি রাজধানীর বিমানবন্দর স্টেশন পার হওয়ার পর আগুন দেওয়া হয়। আগুন দেওয়ার পর প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে তেজগাঁও স্টেশনে গিয়ে ট্রেনটি থামার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভান।

মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন (ছবি: সংগৃহীত)

এই ঘটনার পর গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের বলেন। তবে ঘটনার প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও একজনকেও গ্রেফতার করা যায়নি।

গত ৫ জানুয়ারি রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন দেয়া অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় চার যাত্রী নিহত হন। আহত হন অনেক যাত্রী। ওই ঘটনার একদিন পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ঢাকা মহানগর বিএনপি দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ নবী উল্লাহ নবীসহ আট জনকে গ্রেফতারের দাবি করেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ এক সংবাদ সম্মেলনে সেসময় বলেন, বিএনপির ১০-১১ জন ট্রেনে আগুন লাগার আগে ভিডিও কনফারেন্স করেন। সেখানে তারা শুরু থেকে সবকিছু পরিকল্পনা করেন।

পুড়ে যাওয়া মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস

মামলার তদন্ত সূত্র জানায়, ট্রেনে আগুন লাগানোর ঘটনায় গ্রেফতারের কথা বলা হলেও বিএনপি সংশ্লিষ্ট গ্রেফতার হওয়া ৮ আসামিকে নাশকতার মামলা গ্রেফতার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তীতে তাদের রিমান্ডে নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হলে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে দুই আসামিকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখায় রেলওয়ে থানা পুলিশ। ওই দুজনকে গোপীবাগ ও তেজগাঁওয়ের দুটি মামলাতেই গ্রেফতার দেখানো হয়।

রেলওয়ে থানা পুলিশের দাবি, গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এর বাইরে নতুন কোনও আসামিকে গ্রেফতার করা যায়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সহযোগিতা নিয়ে তারা মূল হোতাদের গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা করছেন।

বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি ফেরদৌস আহমেদ জানান, ট্রেসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় কোনও সংস্থা এখনও কোনও আসামি গ্রেফতার করে রেলওয়ে পুলিশকে দেয়নি। তারাই কারাগার থেকে দুই আসামিকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তারা বিমানবন্দর স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কয়েকজন সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করেছেন। তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় উদ্ধার করা যায়নি। এছাড়া বেনাপোল এক্সপ্রেসে যাত্রীবেশে ট্রেনে উঠে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে। এজন্য বেনাপোল থেকে প্রতিটি স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সন্দেহভাজনদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এছাড়া তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমেও অগ্নিসংযোগে জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।