প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি

একটি বগি থেকে চারটিতে ছড়িয়ে পড়ে আগুন

রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে পরিকল্পিতভাবে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছে পুলিশ। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বলছে, ট্রেনের পাঁচটি বগিতে আগুন লেগেছে। পাওয়ার কারেও আগুন লাগে। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, প্রথমে একটি বগিতে আগুনের সূত্রপাত। সেখান থেকে পরে আরও চারটি বগিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

ফায়ার সার্ভিস ট্রেনের ভেতর থেকে চার জনের লাশ উদ্ধার করেছে। তিন জনকে দগ্ধ অবস্থায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। 

শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাত ৯টা ৫ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। প্রায় সোয়া ১ ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত ১০টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। তবে তখনও আগুন পুরোপুরি নেভেনি, পুড়ে যাওয়া বগিগুলো থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়।

বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিস আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ট্রেনটির ইঞ্জিন থেকে ধোঁয়া হতে দেখা গেছে।

এদিকে দুর্ঘটনার  খবর পেয়ে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে স্বজনরা ঘটনাস্থলে আসছেন। কেউ কেউ স্বজনদের খোঁজ করছেন বিভিন্ন জনের কাছে।

এক যাত্রীর ভাই শিপু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার বোন ছোট বোন এলিনা রাজবাড়ী থেকে এই ট্রেনে করে ঢাকা আসছিল। এখনও তাকে পাইনি। আমার বোন আগুনে দগ্ধ হয়েছে বলে জেনেছি।

বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন

রাজবাড়ী থেকে আসা একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মচারী শাকিল বলেন, আমরা তিন বন্ধু মিলে পাশেই মুড়ি খাচ্ছিলাম। তখন রাত সোয়া ৯টা বাজে। এসে দেখি আরও কয়েকটি বগিতে আগুন ধরে যায়। আমরাই ৯৯৯ ফোন দিয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর পাঠাই। পরবর্তীতে ট্রেনের ভেতর থেকে কয়েকজনকে জানালা দিয়ে নামিয়ে নিয়ে আসি। সব জানালা খোলা ছিল না। কিছু জানালা বন্ধ ছিল।

ঘটনার পর পরই সেখানে উপস্থিত হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসার সদস্যরা পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গণমাধ্যমকর্মী ও উৎসুক জনতাকে সতর্ক করে বারবার। বিস্ফোরণ হতে পারে শঙ্কায় ইঞ্জিনের কাছে কেউ যাতে না যায় সেজন্য সাবধান করা হয় মাইকে।

বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

পুড়ে যাওয়া পাঁচটি বগিই ছিল এসি কার। এসি কারের জানালা বন্ধ থাকায় হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন উদ্ধারকারীরা। উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তিনি যে বগিতে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছেন সে বগির দুই পাশে দরজার কাছে অনেক আহত মানুষকে পড়ে থাকতে দেখেছেন। তার ধারণা এসি বগি হওয়াতে জানালা খুলতে না পেরে দরজার কাছে সব যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে আহত হয়েছেন এবং আগুনের ধোঁয়ায় অনেকে অজ্ঞান হয়ে সেখানেই পড়ে ছিলেন।

বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনে পুড়ে চার জনের মৃত্যু হয়েছে (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাকিবুল হাসান বলেন, গোপীবাগ এলাকায় বেনাপোল এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ট্রেনটি চলন্ত অবস্থায় ছিল। ট্রেনের পাঁচটি বগি পুড়ে গেছে। আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণের এখনও চলছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

এর আগে  ১৯ ডিসেম্বর ভোরে ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনে এক নারী ও তার শিশু সন্তানসহ চারজন দগ্ধ হয়ে মারা যান।