চলন্ত ট্রেনের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়েছিলেন নাফিস

ফরিদপুরের ভাঙা থেকে ঢাকায় কাজের উদ্দেশ্যে আসছিলেন নাফিস আলম (২২)। রাজধানীর গোপীবাগ ক্রসিংয়ে চলন্ত ট্রেনে আগুন দেখে জানালা খুলে লাফিয়ে পড়েন তিনি। পরে একজন মোটরসাইকেল চালকের সহায়তায় কাজীপাড়ায় বন্ধুদের কাছে যান। সেখানে তারা তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে একথা জানান নাফিসের বন্ধু আব্দুল আলীম। নাফিস ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে এবার ডিপ্লোমা  ইঞ্জিনিয়ারিং (কম্পিউটার সায়েন্স) পাস করেছেন। ঢাকায় চাকরিতে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে ভাঙা থেকে ট্রেনে আসছিলেন তিনি। ট্রেনে আগুনে আহত অবস্থায় লাফ দেন নাফিস। এতে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত পান।

বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন

তার বন্ধু আলিম জানান, তার শরীর পুরো কালো হয়েছিল। গলা, কানের পাশে জ্বলে গেছে। আমরা বাসায় তাকে পরিষ্কার করে এখানে নিয়ে আসি।

তার বন্ধুরা জানান, ১ জানুয়ারি একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর ভাঙ্গার বাঁকুড়া গ্রামে। বর্তমান মিরপুর কাজীপাড়ায় তারা পাঁচ বন্ধু মিলে একটি মেসে থাকেন। বৃহস্পতিবার নিাফিজ গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। শুক্রবার ভাঙ্গা থেকে ট্রেনে করে ঢাকায় আসছিলেন। পথে গোপীবাগে ট্রেনে আগুনে আহত হন।

বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন (ছবি: নাসিরুল ইসলাম)

নাফিসকে নিয়ে এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছেন তিন জন। অন্য দুই জন হলেন ডা. কৌশিক বিশ্বাস (৩৫) ও আসিফ মো. খান (৩০)। আসিফের স্ত্রী ট্রেনে আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন।

বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন

বার্ন ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, এখন পর্যন্ত তিন জন ভর্তি আছেন। তাদের বার্ন অল্প হলেও শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। তারা ঝুঁকিমুক্ত নন। আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি। ঘটনাস্থল থেকে আরও আহত রোগী আসতে পারে বলে ধারণা করছি। আমরা প্রস্তুত আছি চিকিৎসার জন্য। এই ধরনের ঘটনা কখনই কাম্য না।

উল্লেখ্য, যশোরের বেনাপোল থেকে ঢাকায় আসছিল ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি। দুপুর পৌনে ১টার দিকে যশোরের বেনাপোল স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছেড়ে আসে। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে এই ট্রেনে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট। প্রায় সোয়া ১ ঘণ্টা চেষ্টার পর রাত ১০টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। ট্রেন থেকে দগ্ধ চার জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।