রফিকুন নবী শিল্পের জগতে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন: ঢাবি উপাচার্য

শিল্পী রফিকুন নবী শিল্পের জগতে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় শিল্পী রফিকুন নবীর ৮০তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করে এই মন্তব্য করেছেন তিনি।

উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, শিল্পের জগতে তিনি একজন মানুষ নন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন। পৃথিবীর যতকিছু আছে সবকিছুর প্রতিফলন হয়েছে তার কর্মের মাধ্যমে। তিনি কাজের মাধ্যমে সমাজের অসঙ্গতিগুলো তুলো আনার চেষ্টা করেছেন। আমি তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

রফিকুন নবী বলেন, যেগুলো এঁকেছি, যা এঁকেছি, যে বিষয়  নিয়ে এঁকেছি সেটা সেভাবে থেকে যাবে। এটাকে সঙ্গী করে আগামী যে কয়বছর থাকবো ছবি এঁকে যাবো। পেছন ফিরে তাকালে মনে হয়— একটা সমুদ্র পার হলাম। সমুদ্র বলছি এই কারণেই কেননা একটা সমুদ্র নানা ঝড়-ঝাপটা দিয়ে যায়। সেভাবেই আমি এগিয়েছি। নানা ঝড়ের মধ্য দিয়ে। আমরা এমন একটা দেশে আছি যেখানে অনেক অনেক কিছু নিয়ে ভাবতে হয়। খুব সহজভাবে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা নেই। কাজ করতে হতো কাজ করে গেছি। আশা করি সামনে এমন কাজ করে যেতে পারবো।

সভাপতির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, নবী ভাইয়ের সাথে পরিচয় যখন তখন তিনি রনবী হয়ে উঠেননি। আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের সময়, তখন হাতে লেখা হতো সব পোস্টার, এই চারুকলাতেই। তখন ছিল আর্ট কলেজ। এই আয়োজনে যারা থাকতেন তাদের মধ্যে নবী ভাই অন্যতম। আমার সৌভাগ্য যে আমি এরকম মানুষের সাথে উঠাবসা করতে পেরেছি। নবী ভাই আজ রনবী হয়ে উঠেছেন। তার আঁকা ছবিগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু একটা আফসোস হচ্ছে তার ছবিগুলো বাংলার মানুষের দেখার সুযোগ হয়ে উঠছে না। শুধু আমরা যারা ঢাকায় আছি তারাই দেখতে পাচ্ছি। নবী ভাই এই পর্যন্ত নিজেকে কতভাবে ভেঙ্গেছেন গড়েছেন। আমরা যারা নবী ভাইকে কাছ থেকে দেখেছি তারাই উপলব্ধি করবো তিনি কত বড় মাপের শিল্পী। কত গভীরভাবে তিনি দেশকে ধারণ করেছেন, খেটে খাওয়া মানুষকে ধারণ করেছেন। তার কাজ বার বার আমাকে অভিভূত করে।

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ইমেরিটাস অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ইমেরিটাস অধ্যাপক শিল্পী হাশেম খান, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান, শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদারসহ আরও অনেকে।

এর আগে চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে শিল্পীর আঁকা কার্টুন, প্রচ্ছদ ও পোস্টার প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী।

বিকালে কেক কাটার মধ্য দিয়ে জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। গান পরিবেশনা, কবিতা আবৃত্তির পর শিল্পীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর মধ্য দিয়ে শেষ হয় জন্মজয়ন্তী উদযাপনের প্রথম ধাপ। শিল্পী রফিকুন নবীর ৮০তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন কমিটি এই জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

এ সময় শিল্পী রফিকুন নবীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় জাতীয় জাদুঘর, প্রথম আলোর পক্ষে আনিসুল হক, জয়নুল আবেদীনের পরিবারের পক্ষে মঈনুল আবেদীন, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের লুবাবা নাহিদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, শিল্পী কেরামত মওলা, গ্যালারি কসমস, নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট, শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটি, শিল্পী শামসুদ্দোহা, দূর্জয় ফাউন্ডেশন, অবীন্তা গ্যালারি, আর্ট বাঙলা ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ টেলিভিশন, মুন্সি গ্রুপ, স্টুডিও ভার্টিকেল, শঙ্কজ শাজাহান, কালার্স, বন্ধু গ্রুপ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সমিতি, খেলাঘর, শিল্পী জাহিদ মোস্তফা, এথিক্স ক্লাব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট ও চারুকলা অনুষদের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।