সম্প্রতি এক ট্রান্সজেন্ডার নারীর একটি সেমিনারে যোগদানকে কেন্দ্র করে আলোচনায় আসে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিবাদের মুখে ট্রান্সজেন্ডার নারী হো চি মিন ইসলামকে ক্যাম্পাসের ভেতর আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে না দেওয়ার দাবি জানানো হয়। আর তাতে আয়োজকরা বক্তার তালিকা থেকে তাকে বাদ দেন। এ প্রসঙ্গে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় তখন কিছু না জানালেও পরে এক বিবৃতিতে তাদের অবস্থান জানিয়েছে। রবিবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে আমরা শিক্ষায় শ্রেষ্ঠত্বের জন্য চেষ্টা করি এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ গড়ে তুলি— যা সবাইকে সম্মান জানায়। সম্প্রতি উইমেন্স ক্যারিয়ার কার্নিভাল ইভেন্টটি এই আদর্শগুলো অর্জনের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেছে। আমরা এই প্রোগ্রামে হো চি মিন ইসলামের অংশগ্রহণ সম্পর্কে জনগণের বিভিন্ন মতামতকে গ্রহণ এবং সম্মান করি। এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সমাজের বিভিন্ন বিশ্বাস এবং মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করে।
এনএসইউ দৃষ্টিভঙ্গি বিস্তৃত করতে এবং সম্মানজনক সংলাপকে উৎসাহিত করার জন্য শিক্ষার শক্তিতে বিশ্বাস করে। মিস ইসলামের সম্পৃক্ততার লক্ষ্য ছিল— কর্মক্ষেত্রে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্জনগুলো বোঝার প্রচার এবং উদযাপন করা। যাই হোক, এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটি কোন প্রেক্ষাপটে ঘটেছে তাও জানানো গুরুত্বপূর্ণ।
হিরোস ফর অল (এইচএফএ) এবং আই-সোশ্যাল এর আয়োজনে গত ২৪ থেকে ২৫ নভেম্বর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ভেন্যুতে ক্যারিয়ার অ্যান্ড প্লেসমেন্ট সেন্টারের (সিপিসি) সহযোগিতায় সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় উইমেন্স ক্যারিয়ার কার্নিভাল ২০২৩। লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, নেতৃত্বের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ক্যারিয়ারের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে নারীদের অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে এই আয়োজন করা হয়।
হো চি মিন ইসলাম এই অনুষ্ঠানের অন্যতম বক্তা ছিলেন। কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনার পর এই আলোচনা বাতিল করা হয়েছিল। এনএসইউ বক্তা, আয়োজক এবং হোস্টের জন্য এ ঘটনার দুঃখ প্রকাশ করে। এই ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট সমালোচনা হয়েছে এবং আমরা এই প্রতিক্রিয়াটিকে উন্নতির সুযোগ হিসেবে মূল্য দেই। আমরা আমাদের ভবিষ্যতের প্রচেষ্টায় এই অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষাগুলো সহযোগিতামূলকভাবে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করি। এটাও আমাদের নজরে এসেছে যে, এই ঘটনা সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, দাবি করা হয়েছিল যে, উপাচার্যের কার্যালয় আলোচনা বাতিল করেছে। তবে আমরা স্পষ্ট করতে চাই যে, দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার সময় এনএসইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম দেশের বাইরে ছিলেন। উপরন্তু, বলা হয়েছে প্রো-ভিসি থেকে যোগাযোগের উল্লেখ ছিল। তবে এটি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে, এনএসইউতে বর্তমানে কোনও প্রো-ভিসি নেই।
আমরা এটি স্পষ্ট করতে চাই যে, সিপিসি এবং ইভেন্ট আয়োজক, হিরোস ফর অল (এইচএফএ) এবং আই-সোশ্যালের মধ্যে সব যোগাযোগ হয়েছিল। আমরা হিরোস ফর অল (এইচএফএ) এবং আই-সোশ্যালকে তাদের প্রোগ্রামের চমৎকার আয়োজনের জন্য সাধুবাদ জানাতে চাই। এনএসইউ এই ইভেন্টটি আয়োজনে আয়োজকদের সহায়তা করতে পেরে আনন্দিত।
সামনে এগিয়ে গিয়ে আমরা লিঙ্গ সমতা এবং একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ গড়ে তুলতে সংগঠক এবং বক্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার অপেক্ষায় রয়েছি। আমরা এসডিজি-৫ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে লিঙ্গ সমতা ও ক্ষমতায়নকে সমর্থন করে— এমন সুযোগ সৃষ্টিতে আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি। যেখানে প্রতিটি কণ্ঠস্বর মূল্যবান। আমরা ক্যাম্পাসে সবার জন্য একটি নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক স্থান বজায় রাখতে নিবেদিত। আমরা আমাদের সম্প্রদায়কে তাদের সমর্থন এবং প্রতিক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই, যখন আমরা এই জটিল সমস্যাগুলো মোকাবিলা করি এবং আমরা এমন একটি ভবিষ্যতের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকি, যা সবব্যক্তির বৈচিত্র্যকে সম্মান করে।
আরও পড়ুন:
আবারও আলোচনায় নর্থ সাউথ, অনুষ্ঠানে যেতে পারলেন না ট্রান্স নারী হোচিমিন